চট্টগ্রামের ৫ লাখ ৮৮ হাজার তরুণ ‘কিছুতেই নেই’

40

আসাদুজ্জামান রিপন

পড়ালেখা, চাকরি, পারিবারিক কিংবা অর্থনৈতিক কোন ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত নন চট্টগ্রামের সাড়ে ৫ লাখ তরুণ। এদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে দেড় লাখের বেশি বসবাস করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায়। তারা মাদকাসক্ত, চুরি-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘সময়োপযোগী শিক্ষার অভাব, ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং কর্মসংস্থানের অভাবে বিপথে চলে যাচ্ছেন তারা। এ বিশাল তরুণগোষ্ঠীর কাজ থেকে দূরে থাকা সমাজের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। তাদের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করা না গেলে ভবিষ্যতে সামাজিক পরিবেশ চরম খারাপ হয়ে যেতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত চট্টগ্রাম জেলার জনশুমারি ও গৃহগণনা- ২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রামের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩১০ জন জনসংখ্যা কিছুই করে না। এর মধ্যে ছেলের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৯২৬ জন এবং মেয়ের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৪ জন। আবার তাদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এ সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৩১ জন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮২৭ জনের বাস। তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজার ১২৮ জন।
এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি গ্রামীণ এলাকায়। এ জনসংখ্যার ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪২৪ জন গ্রামে বসবাস করে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফটিকছড়ি এবং কম কর্ণফুলীতে। এর মধ্যে ফটিকছড়িতে ৫০ হাজার ৫৭৯ জন। ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার ৪২৭ জন। কর্ণফুলী উপজেলায় ১৪ হাজার ৩৯৭ জন। ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ৮ হাজার ৯২৮ জন। আনোয়ারা উপজেলায় ১৯ হাজার ৭১৯ জন, বাঁশখালী উপজেলায় ৩৭ হাজার ৯৫৫ জন, বোয়ালখালী উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৯৫ জন, চন্দনাইশ উপজেলায় ১৬ হাজার ৬২৮ জন, হাটহাজারী উপজেলায় ৩৩ হাজার ৮৪২ জন, লোহাগড়া উপজেলায় ২৪ হাজার ৩৪৩ জন, মিরসরাই উপজেলায় ৩৩ হাজার ৪১০ জন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ২৯ হাজার ৫১১ জন, রাউজান উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৪৫ জন, স›দ্বীপ উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৫২ জন, সাতকানিয়া উপজেলায় ৩১ হাজার ৫১৭ জন এবং সীতাকুন্ড উপজেলায় ৩০ হাজার ৯২৫ জন বসবাস করে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ প্রজন্মের বেশিরভাগ তরুণ মোবাইল ফোনে আসক্ত। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিচর্চাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে বিভিন্ন রাজতৈনিক নেতার আশ্রয়ে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়েন তারা। পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে সাইবার অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। গ্রামীণ এলাকায় তরুণদের নিষিদ্ধ মোবাইল গেমে আসক্তি বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সমাজবিজ্ঞানী ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী ‘কিছুতেই নেই’ এটি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সামাজিক গতিশীলতা আক্রান্ত হয়। বিশাল সংখ্যক মাদকাসক্ত, কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা, খেলাধুলা এবং সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে তাদের। বিশেষ করে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তরুণরা সম্পদে পরিণত হবে।’
চট্টগ্রাম যুবউন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী আবদুল আলীম বলেন, ‘জেলা উপজেলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবছর সাড়ে আট হাজার জনকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বেকার জনগোষ্ঠীর দক্ষতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সাবলম্বী হতে প্রতিবছর ৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিশোর গ্যাং বলতে সমাজ যাদের মিন করছে, আমরা সেভাবে দেখতে চাই না। কিশোর একটি পবিত্র শব্দ। যাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ পাই, তারা আসলে বখাটে। তাদের বেশিরভাগ পড়ালেখা বা কাজের মধ্যে নেই। আবার অনেকে আছে যারা সহপাঠী, পাড়া-মহল্লার বড় ভাই কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তির প্ররোচনায় পড়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বখাটে কর্মকান্ডের জন্য তাদের অভিভাবকদের ডেকে সর্তক করা হয়।