চট্টগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত জনশুমারির তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে মোট জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। ২০১১ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ ১৬ হাজার জন। এক দশকে দশ জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার।
নগরীর সার্কিট হাউসে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এর জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। এতে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব দেব দুলাল ভট্টাচার্য্যরে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চন্দন কুমার পোদ্দার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছে তা চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উন্নয়নে কাজে লাগবে। বিশেষ করে স্যানিটেশন, জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামে এখনো ১.৪৯ শতাংশ মানুষ কাঁচা বা খোলা টয়লেট ব্যবহার করেন। এটিকে কিভাবে শূন্যে নামিয়ে আনা যায় তা নিয়ে কাজ করার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে অনুরোধ করছি।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২২ সালের ১৪ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে জনসংখ্যা ছিল ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। এর মধ্যে পল্লী অঞ্চলে জনসংখ্যা ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৯ জন এবং শহর অঞ্চলে জনসংখ্যা ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন ১ হাজার ৭৩৬ জন। ২০১১ সালে ছিল ১ হাজার ৪৪২ জন। জেলায় জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১১ সালে এ হার ছিল এক দশমিক ৪০ শতাংশ। চট্টগ্রামে মুসলিম জনসংখ্যা ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। হিন্দু জনসংখ্যা ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। বৌদ্ধ জনসংখ্যা এক দশমিক ৬৩ শতাংশ। খ্রিস্টান জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ। অন্যান্য শূন্য ০৩ শতাংশ।
জনশুমারীর তথ্যে জানানো হয়, জেলায় অবিবাহিত নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। নারী ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশের বিপরীতে পুরুষের এই হার ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আবার জেলায় পুরুষের চেয়ে বেশি নারীর সংখ্যা। প্রতি একশ’ জন নারীর অনুপাতে পুরুষের সংখ্যা ৯৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চট্টগ্রামে পুরুষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ১১৩ এবং নারীর সংখ্যা ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৬ জন। সে হিসেবে চট্টগ্রামে নারী ২৮ হাজার ৮১৩ জন বেশি। বিবাহিত নারী ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বিবাহিত পুরুষ ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বিধবা ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ, বিপত্নীক শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ, তালাকপ্রাপ্ত নারী শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ, পুরুষ শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ, দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন নারী শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ, পুরুষ শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ।
সবমিলিয়ে ১৫ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ফটিকছড়িতে ৬ লাখ ৪২ হাজার ৭৬ জন। এছাড়া বাঁশখালীতে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৫ জন, সীতাকুন্ডে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৮ জন, হাটহাজারীতে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৯ জন, সাতকানিয়ায় ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫১ জন, মিরসরাইয়ে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৭ জন, আনোয়ারায় ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৮২ জন, লোহাগাড়ায় ৩ লাখ ২৮ হাজার ২০৬ জন, পটিয়ায় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৮ জন, রাউজানে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ জন, স›দ্বীপে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৩ জন, বোয়ালখালীতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৭৫ জন, চন্দনাইশে ২ লাখ ৫২ হাজার ২৩৮ জন, কর্ণফুলীতে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৯৭ জন।
চট্টগ্রামে সাক্ষরতার হার ৮১ দশমিক ০৬ শতাংশ, এর মধ্যে নারী ৭৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং পুরুষ ৮২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জেলায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার প্রায় ৩০ দশমিক ৩৮ শতাংশ তরুণ-তরুণী পড়ালেখা, কাজ বা কোনো ট্রেনিং কার্যক্রমে যুক্ত নেই। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, পুরুষের সংখ্যা ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ।
এদিকে চট্টগ্রামে কমছে কৃষিনির্ভর পেশার পরিমাণ। জেলায় কৃষিক্ষেত্রে কাজ করা জনসংখ্যার পরিমাণ ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর বিপরীতে শিল্পখাতে ২৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং সেবাখাতে ৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ জড়িত। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৭ দশমিক ০৭ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। পুরুষ ৮৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৫০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।