চট্টগ্রামের উপকূল রক্ষায় আসছে বড় সুখবর

20

রাহুল দাশ নয়ন

বাঁশখালী, আনোয়ারা, বোয়ালখালী উপজেলার সাগর ও নদী তীরবর্তী মানুষ সুখবর পেতে যাচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনীতি পরিষদ (একনেক) সভায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে পানি ব্যাবস্থাপনা ও ভাঙনরোধে নেয়া ১ হাজার ৮ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্প। একনেক সভার আলোচ্যসূচি তালিকার অগ্রভাগেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই দু’টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া আনোয়ারা-বাঁশখালী প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুনে এবং বোয়ালখালীর প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জুনে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘আগামী একনেক সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দু’টি প্রকল্প অনুমোদন হতে পারে। উপক‚ল রক্ষায় দু’টি প্রকল্প অনুমোদনের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ সুখবর পেতে যাচ্ছে’।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের’ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। সেসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮ সদস্যের সমীক্ষা কমিটি প্রকল্পটির গুরুত্ব তুলে ধরে সুপারিশ করে। গত ৭ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারা উপজেলায় ৫ দশমিক ১৭৫ কিলোমিটার ও বাঁশখালী উপজেলায় ৭ দশমিক ৫১০ স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা কাজ করতে ডিপিপিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১ দশমিক ৫৮৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ ও ঢাল সংরক্ষণ এবং ১ দশমিক ১০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ করা হবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৭৪ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাঁশখালীর পুকুরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ, আনোয়ারার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের সাঙ্গু নদী সংলগ্ন এলাকাসমূহ নদী ভাঙ্গন কবল থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও বাঁশখালীর খানখানাবাদ, বাহারছড়া, ছনুয়া, আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকাসমূহ জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষা পাবে। প্রকল্প এলাকায় কৃষি নিবিড়তা বৃদ্ধি, মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন, লবণ চাষের ক্ষেত্র বৃদ্ধি, পর্যটন খাতের বিকাশ, জীববৈচিত্রের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বিধায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিভাগ-১) শওকত ইবনে শহীদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বিরূপ প্রভাব, আকস্মিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢল রোধ হবে। আনোয়ারা-বাঁশখালী উপক‚লের জন্য প্রকল্পটি অত্যন্ত কার্যকর। অর্থনৈতিকভাবেই এ প্রকল্পের গুরুত্ব রয়েছে’।
বোয়ালখালীর ‘কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালসমূহের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজ’ প্রকল্পটি ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোয়ালখালীর কধুরখীল, চরণদ্বীপ, শ্রীপুর খরণদ্বীপ, শাকপুরা, গোমদন্ডী ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত এলাকায় অবস্থিত জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহাড়ি খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী, বোয়ালখালী খাল, রাইখালী খাল, ছন্দরীয় খালা, ভারাম্বা খাল, নাজিরখালী খালের ভাঙন হতে রক্ষা করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলী নদীর বামতীরবর্তী চট্টগ্রাম-বোয়ালখালী সংযোগ সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহে তীর সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট নদী-খালসমূহের তীর ভাঙনরোধ, কর্ণফুলী নদী এবং এর সংযুক্ত খালসমূহের তীর সংরক্ষণ কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে গ্রামীণ বেকারত্ব দূরীকরণ, নদী ভাঙন রোধের মাধ্যমে জীনগত, প্রজাতিগত এবং বাস্তুসংস্থানগত বৈচিত্র রক্ষা, নদী তীরবর্তী ভাঙনকবলিত স্থান প্রতিরক্ষা করে পর্যটন শিল্প বিকাশ ঘটবে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভায় প্রকল্পটি পুনর্গঠন করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (রাঙামাটি বিভাগ) তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর বাম পাড় ও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি খালের ভাঙন রোধে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও দোকানপাট, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং পাকা রাস্তা ফসলি জমি রক্ষা পাবে। যোগাযোগ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নেও প্রকল্পটির ভূমিকা অত্যধিক। ১৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাবে’।