চকরিয়ায় ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দী হাজারো মানুষ

1

চকরিয়া প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত তিনদিন ধরে টানা প্রবল বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এখনো মাতামুহুরি নদীর বিপদ সীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে চকরিয়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ঢলের পানি কমার সাথে সাথে মাতামুহুরী নদীর দু’ক‚লে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুইদিনে ঢলের পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে অন্তত ১২টি বসতবাড়ি। এখনো থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার গভীর রাতে চকরিয়া পৌরসভার কোচপাড়া বাঁশঘাটা এলাকায় মাতামুহুরি নদীর ক‚লঘেষেঁ পৌর শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে ১২টি পরিবারের বসতঘর। ভাঙনের কবলে পড়ার আশংকা থাকায় নদী তীরবর্তী আরোও ৪০টি পরিবারকে গভীর রাতে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন চকরিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। এ সময় তিনি কোচপাড়া অংশে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
এদিকে, এখনো ভারীবর্ষণ অব্যাহত থাকায় চকরিয়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার বমুবিলছড়ি, কাকারা, লক্ষ্যারচর, সুরাজপুর-মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালি, হারবাং, বরইতলী ও বিএমচর ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলের অনেক বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ঢলের পানিতে এসব ইউনিয়নের নিচু এলাকার সড়কসমূহ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি এসব ইউনিয়ন সমূহের নিচু এলাকার রোপিত আমন ক্ষেত ও ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, তাঁর ইউনিয়নের মানিকপুর এলাকায় নিম্নাঞ্চলের প্রায় দুই শতাধিক বসতবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড় ধ্বংসের আশংকা থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, বন্যার পানি কমার সাথে সাথে চিরিঙ্গা-মানিকপুর সড়কের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফাইতং ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত ও সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ছিকলঘাট-ইয়াংছা সড়কের সুরাজপুর এলাকার মাতামুহুরী ব্রিজের সাথে বড় একটি বাঁশের ভেলার ধাক্কায় ব্রিজের পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান বলেন, আমার ইউনিয়নে ডেইংগাকাটা, পহরচান্দা, রসুলাবাদ, শান্তিরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার লোক পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পানি নামার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকার সড়কের ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠতে দেখা গেছে। এবারের বন্যায় বরইতলী ইউনিয়নের অধিকাংশ সড়ক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকাদর বলেন, বেতুয়াবাজার-বাংলাবাজার সড়কের বিভিন্ন অংশ পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৈয়ারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মক্কি ইকবাল হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নের অধিকাংশ ধানক্ষেত ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।