ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায়ও মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা

2

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে জনবল সংকট নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ১শ শয্যার বান্দরবান সদর হাসপাতাল। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসাসেবার মান। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগীরা। তবে জনবল সঙ্কটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবান সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত রোগী সেবা নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন বান্দরবান সদর হাসপাতালে। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
জানা গেছে, জেলা সদরের একমাত্র সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে আসেন এ হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কট, অকেজো যন্ত্রপাতির কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। এছাড়া অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের টয়লেট থেকে শুরু করে রোগীদের থাকার ওয়ার্ড পর্যন্ত ভরে গেছে ময়লা-আবর্জনায়। ফলে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কোন কোন কক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাফির মত জরুরি সেবা। শুধু তাই নয় ময়লা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরাও।রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে আসা ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত চিংম্রাসাং বলেন, আমি দুদিন ধরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি আছি। কিন্তু আসার পর থেকে হাসপাতালে পানি নাই। বাথরুমে যেতে পারছি না, গোসল করতে পারছি না।
আরেক রোগী ফাতেমা আক্তার বলেন, দাঁত ব্যাথার কারণে সকাল থেকে সরকারি হাসপাতালে আছি, কিন্তু ডাক্তার পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একজন নার্স আমাকে তিনটি ওষুধ লিখে দিয়েছেন। সেখান থেকে একটি ওষুধ এখান থেকে পেয়েছি, অন্য দুইটা বাইরে থেকে নিতে বলেছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক রোগী কুলছুমা আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ, তাই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। কিন্তু এখানে যে পরিবেশ, আরও অসুস্থ হয়ে যাই। একটা রোগ নিয়ে এসে তিনটা রোগ নিয়ে বাড়ি যেতে হয়।
পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কটের কারণে অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে জেলা সিভিল সার্জন মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে জনগণ হাসপাতালমুখি হচ্ছে কিন্তু জনবল বাড়েনি। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে ১শ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় রোগীদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে গিয়ে কিছুটা ত্রুটি হতে পারে। পরবর্তীতে চিকিৎসা সেবার মান আরও বাড়ানো হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে ১শ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হয় বান্দরবান সদর হাসপাতাল। তবে ১শ শয্যার হাসপাতাল হলেও ৫০ শয্যার জনবল ও চিকিৎসক দিয়েই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।