গ্রাম আদালত সক্রিয় করলে শান্তি-সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে

4

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) লুৎফুন নাহার বলেছেন, সারাদেশে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নি¤œ ও উচ্চ আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ বর্তমান সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। গ্রাম আদালতে প্রান্তিক মানুষের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে বাস্তব পরিস্থিতি দেখে ন্যায় বিচার করতে হবে। ফৌজদারী মামলা ৩০ দিনে ও দেওয়ানী মামলা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সরকারি ছুটির দিনে মামলা পরিচালনা করা যাবে না। জেলার গ্রাম আদালতগুলোতে অনেক মামলা পেন্ডিং রয়েছে। প্রত্যেক গ্রাম আদালতে মাসে কমপক্ষে ৫টি মামলা নিষ্পত্তিসহ রেজিস্টার্ডভুক্ত করে জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদন আকারে পাঠাতে হবে। চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব ও মেম্বাররা আরও আন্তরিক হলে গ্রাম আদালতের সার্বিক কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।
নগরীর পিটিআই মিলনায়তনে আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয় শীর্ষক অর্ধ-বার্ষিক সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে লুৎফুন নাহার এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্পের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ সভার আয়োজন করেন। জেলার ১৫ উপজেলার ১৯১টি ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরা সভায় উপস্থিত থেকে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
সহকারী কমিশনার (স্থানীয় সরকার) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহীদ ইশরাকের সঞ্চালনায় সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে ২০২৩-২০২৪ কার্যক্রমের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জসমূহ, শিক্ষনীয় দিকসমূহ, গ্রাম আদালতে বিচার প্রক্রিয়া, মামলার নথি প্রস্তুত ও রেজিস্টার সমূহের ব্যবহার এবং সুবিধাভোগীর ভিডিও উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি’র এভিসিবি–৩ প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মো. সাজেদুল আনোয়ার ভূঁঞা।
সভায় বক্তব্য রাখেন মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরীন, প্রকল্প বাস্তবায়ন সহযোগী সংস্থা ইপসা’র প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজাহান হোসাইন, পটিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্লাবন কুমার বিশ্বাস ও আনোয়ারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুছাইন মুহাম্মদ।
উপ-পরিচালক বলেন, মানুষ যাতে গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা না হারায়, সে জন্য জনপ্রতিনিধিদেরকে নিরপেক্ষভাবে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে বিচার প্রার্থীরা নি¤œ ও উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবে না। কোন কোন ইউনিয়নে মামলা একেবারেই জিরো, এলাকা শান্তিপূর্ণ থাকলে ভালো, নইলে এটা আমাদের কাম্য নয়। গ্রাম আদালতে ফরমেটগুলো গ্রহণের মাধ্যমে যথাযথভাবে মামলা পরিচালনা করতে হবে। তাহলে গ্রাম আদালত আইন বাস্তবায়ন হবে। আগে গ্রাম আদালতে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিচারিক এখতিয়ার ছিল, এখন ৩ লাখ। মিথ্যা মামলা করলে সেটির জরিমানার বিধান রয়েছে আইনে।
তিনি বলেন, গ্রাম আদালতের এজলাসগুলোকে জুডিশিয়াল আদালতের এজলাসের আদলে তৈরি করা হয়েছে। এখানে ১৯১টি ইউনিয়েনের মধ্যে ১১৯টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত এজলাস রয়েছে, এগুলো সুন্দর ও পরিপাটি এবং ৩০টিতে ভবন নেই। বাকী গ্রাম আদালতের এজলাস ও ভবনগুলোর কাজ এ প্রকল্পের আওতায় সম্পন্ন হবে। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণগণকে অবহিত করতে র‌্যালি ও প্রচার–প্রচারণামূলক কার্যক্রম আরও বেগবান করা হবে। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম আরও সক্রিয় করতে আগামী জুলাই–আগস্ট মাসে ইউপি সচিব, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও গ্রাম পুলিশদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। গ্রাম আদালত সক্রিয় করলে গ্রামে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির সহজে, কম খরচে, স্বল্প সময়ে, সঠিক বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
এভিসিবি-৩ প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মো. সাজেদুল আনোয়ার ভূঁঞা জানান, চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি-এপ্রিল মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলার গ্রাম আদালতে পেন্ডিং মামলার সংখ্যা ২২৭টি। জেলায় মোট মামলা দায়ের হয় ১০৩১টি (সরাসরি ইউপিতে দায়ের ৮৮৯টি ও জেলা আদালত থেকে প্রেরিত ১৪২টি)। বিধি-৩১, প্রাক বিচার শুনানিতে নিষ্পত্তি ৫২৯টি, বাতিল খারিজ ৪৭টি ও বর্তমানে অনিষ্পত্তিকৃত মামলা ৬৮২টি। সরাসরি দায়েরকৃত মোট ৮৮৯টি মামলার মধ্যে পুরুষ আবেদনকারী ৬৫৭ জন (৭৩ দশমিক ৯১ শতাংশ), নারী আবেদনকারী ২৩২ জন (২৬ শতাংশ এবং ১৩১ (৫৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ) গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বিচার পেয়েছে। বিজ্ঞপ্তি