গ্রাম আদালতে বাদি-বিবাদি পক্ষের মারামারি, ভাংছুর, নথিপত্র তচনছ

2

চকরিয়া প্রতিনিধি

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গ্রাম আদালত চলাকালে বাদি পক্ষের সাথে বিবাদি পক্ষের তুমুল বাগবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিবাদিপক্ষ ইউপি চেয়ারম্যানকে গালাগাল করে আদালতের এজলাস কক্ষের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বিভিন্ন সালিশী মামলার নথিপত্র তছনছ করে ফেলে।
এ সময় তাদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে রিদুয়ান নামের এক চৌকিদার ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসাইন ছাড়াও বাদি পক্ষের বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে বিবাদি পক্ষের লোকজন। এহেন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে গ্রাম আদালত বন্ধ করে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি মৌখিক ও পরে লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান। গত ২৩ জুন বেলা দেডটার দিকে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনায় শনিবার ( ২৯ জুন) রাতে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চকরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। হামলার সময় আহত গ্রাম পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ রিদুয়ান থানায় এই অভিযোগটি জমা দেন।
থানায় দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জমির বিরোধ নিয়ে ইউনিয়নের পহরচাঁদা গ্রামের রিনা আক্তার বাদি হয়ে আকবর হোসেন ও এনামুল হক গং এর বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ দেন। এরপর নিয়মানুযায়ী নোটিশ দিয়ে বাদি ও বিবাদিপক্ষকে সালিশকার নিয়োগ দিতে বলা হয়। কিন্তু বিবাদিপক্ষ কোন সালিশকার নিয়োগ না দিয়ে দ্বিতীয় কার্যদিবস তথা গত ২৩ জুন গ্রাম আদালত চলাকালে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়। বেলা দেড়টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণের উপস্থিতিতে এই অভিযোগটি নিয়ে শুনানি শুরু হয়। এ সময় বাদি তার বক্তব্য উপস্থাপন করাকালে বিবাদি পক্ষ বিভিন্ন কটুক্তিমূলক কথাবার্তা ছুঁড়ে দিয়ে গ্রাম আদালতের স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এ সময় এজলাসে বসে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান উভয়পক্ষকে গ্রাম আদালতের সম্মান রক্ষায় সংযত আচরণ করার নির্দেশ দেন। তখনই এখানে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না মর্মে হৈ চৈ শুরু করেন বিবাদি পক্ষের লোকজন। এ সময় তারা, ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসাইন, গ্রাম পুলিশ রিদুয়ানসহ বেশ কয়েকজনের ওপর হামলে পড়ে। বাদি পক্ষও এই ঘটনার পাল্টা জবাব দেয়। এ সময় তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও বিবাদিপক্ষের লোকজন গ্রাম আদালতের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর, বিভিন্ন নালিশি অভিযোগের নথিপত্র তছনছ করে। এমনকি চেয়ারম্যানকেও উদ্দেশ্যে করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বিবাদি পক্ষের লোকজন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী সদস্য খালেদা বেগম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত চলাকালে বিশৃঙ্খল কর্মকান্ড অতীতে আর কেউ ঘটানোর সাহস করেনি। এই ধরনের ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতকে অবজ্ঞা ও অসম্মান করার মতোই। ঘটনার সময় ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান বার বার বাদি-বিবাদিপক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।
এরপরও একটি কুচক্রিমহল চেয়ারম্যানকে ঘায়েল করাসহ গ্রাম আদালতের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
এ ব্যাপারে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত চলাকালে একটি ঘটনায় অভিযুক্ত বিবাদি পক্ষ শুরু থেকেই যে অসৌজন্যমূলক আচরণ করাসহ এজলাসের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বিভিন্ন অভিযোগের নথিপত্র তছনছ করেছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে অবহিত করা হয়। পাশাপাশি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় শনিবার রাতে পরিষদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।