গোলচত্বর যেন ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক

13

ওয়াসিম আহমেদ

পরপর তিনটি লাগোয়া চার দেয়ালের ঘর। সেসব ঘরের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসছে তিন মুক্তিকামী রক্তাক্ত মানুষের অবয়ব। লালদীঘির সম্মুখে চৌরাস্তার গোলচত্বরের নকশায় এমনই দৃশ্য ফুটে উঠেছে। মূলত লালদীঘির মাঠকে ঘিরে ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান এবং ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শুধু লালদীঘি নয়, নগরীর ১০ ব্যস্ততম সড়ক মোড়ে পরিবহন শৃঙ্খলা নিশ্চিতে গোলচত্বর স্থাপন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রকৌশল বিভাগ। এতে মোট ব্যয় হবে ১২ কোটি টাকা। প্রতিটি গোলচত্বরে ইতিহাস-ঐতিহ্যকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। ফলে পরিবহন শৃঙ্খলার পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারকে রূপ নিচ্ছে গোলচত্বরগুলো।
চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা ৬০ দশক থেকে দেশ ও নগরের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে স্বচক্ষে দেখেছি। নতুন প্রজন্ম হয়তো বইয়ে পড়েছে। কিন্তু তা ধারণ করা কঠিন। তাই নগরীর গোলচত্বরগুলো ডিজাইন করার সময় ওই এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিতে বলেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম বীর চট্টলার ঐতিহ্যকে ধারণ করতে পারে।’
দুই ইপিজেডে মাঝেই নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং মোড়। তাই মোড়টির গোলচত্বরের নকশায় শিল্পাঞ্চলের প্রতীক যান্ত্রিক চাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একইভাবে জিপিও’র মোড়ের নকশায় লাল রং-কে মুখ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে পূর্বদেশকে জানান, গোলচত্বরগুলোর নকশা তৈরিতে আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। চকবাজারের অলি খাঁ জামে মসজিদ দুইশ বছরের পুরনো। তাই এ মোড়ের গোলচত্বরকে মসজিদটির ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রেখে নকশা করা হয়েছে। প্রতিটি গোলচত্বর নিয়ে মেয়র মহোদয় ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে ধারণা দিচ্ছেন। আমরা সে অনুসারে তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি একনেক সভায় শতভাগ সরকারি অর্থায়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে ওসব গোলচত্ত¡র।
প্রকল্পের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে চকবাজার, বহদ্দারহাট, একে খান মোড়, অলংকার, সল্টগোলা ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং, কাঠগড়, সাগরিকা, ২নং গেট ও অক্সিজেন মোড়ে গোলচত্বরগুলো করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গোলচত্বরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া পূর্বদেশকে বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় গোলচত্বর খুবই প্রয়োজন। আমাদের শহরে আগে থেকে গোলচত্বর রয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। নকশা করার সময় যান চলাচল নিয়ে স্টাডি করে বাস্ততার নিরিখে করতে হবে। অন্যথায় টাকা খরচ হবে, কিন্তু সুফল আসবে না। তাই ভালো পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে এসব গোলচত্বরের ডিজাইন করতে হবে।