গুমাইবিলের রোপা আমন ও বীজতলা পানির নিচে

5

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

দেশের তিন দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী রাঙ্গুনিয়া গুমাই বিল পাঁচদিনের টানা বর্ষণে গুমাই বিলের আড়াই হাজার হেক্টর জমির রোপা আমনের চারা ও বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। গুমাই বিল ছাড়াও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া বিল, রইস্যা বিল, তইলাভাঙা বিল ও তালুকদার বিলসহ কমপক্ষে ১৫টি বিল ডুবে গেছে। গুমাই বিলে চাষাবাদ করা সাড়ে ৩ হাজার কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ২০১৫ সালেও এবারের মতো অতি বৃষ্টিপাতের কারণে গুমাই বিলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল সে সময় বিলে রোপা আমনের চারা প্রায় ১০ দিন পানির নিচে থাকায় পচে গেলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারও সেই আশঙ্কায় গুমাই বিলের তিন হাজার কৃষকের চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।
গুমাই বিলের পাঠান পাড়া গ্রামের কৃষক নুরল হক জানান, টানা পাঁচদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল। এতে ডুবে গেছে কৃষকের রোপা আমনের চারা ও বীজতলা। আর দুইদিন এভাবে পানির নিচে ডুবে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে আমনের চারাগুলো। এতে লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষক।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম বড়ুয়া জানান, আষাঢ় মাসে আমন চাষাবাদ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এবার বৃষ্টি না হওয়ায় পানি সংকটে যথাসময়ে আমন চারা রোপণ করা সম্ভব হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জমিতে সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে গুমাই বিলের কৃষকরা চারা রোপণ করেন।
এবার গুমাই বিলের আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এরমধ্যে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছেন কৃষকরা। কিছু জমি এখনো বীজতলা ও চারা রোপণের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করতে কৃষকদের গড়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে জলাবদ্ধতা দীর্ঘায়িত হলে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন গুমাই বিলের কৃষকরা।
আর মাত্র দুইদিন পানির নিচে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে এসব চারা। তবে রোপণ করা চারার মধ্যে অর্ধেকই ব্রি-ধান-৫১ জাতের। যেগুলো ১৫ দিন পর্যন্ত পানির নিচে থাকলেও ক্ষতি হয় না। এতে কিছুটা আশাবাদী কৃষকরা।
গুমাই বিলের কৃষক অভিজিৎ কুমার দে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার পাঁচ কানি জমিতে রোপা আমনের চারা রোপণ শেষ হয়। শনিবার সকালেই ডুবে যায় গুমাই বিল। জমি তৈরি, চারা রোপণ, সার ও খাজনাসহ পাঁচ কানি জমিতে এ পর্যন্ত এক লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে।’ গত চারদিন ধরে জমিগুলো পানির নিচে ডুবে থাকায় কৃষকেরআমন চাষাবাদে চরম অনিশ্চযতা দেখা দিয়েছ্ ে সাথে বিপাকে পড়েছে বর্গাচাষিররা
এদিকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র জানায়, টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমার সন্নিকটে। পানির স্তর বাড়লে বাঁধের স্পিলওয়ের ১৬টি গেট খুলে দেওয়া হবে।
কৃষক আবদুল হাকিম বলেন, কাপ্তাই বাঁধের পানি ছেড়ে দিলে এবং উজান ঠেলে জোয়ারের পানি ঢুকলে গুমাই বিলের পানি নামবে না। ফলে আমনের চাষাবাদ আর হবে না। তখন নতুনভাবে বীজতলা তৈরি করে পুনরায় চাষাবাদ করার মৌসুম থাকবে না বলে তিনি জানান।
সরেজমিন দেখা যায়, কাপ্তাই সড়কের মরিয়মনগর চৌমুহনী পার হলেই দেখা মেলে গুমাই বিলের। বৃষ্টির পর বিশালাকৃতির ডোবার রূপ নিয়েছে এই শস্যভান্ডর। অনন্তত চার ফুট পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে বিলে। বিলের পাড়ে কৃষকদের উদ্বিগ্ন হয়ে রোপণ করা চারাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী পানি ব্যবস্থাপনা অ্যাসোসিয়েশনের ইছামতি ইউনিটের সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, টানা বৃষ্টিতে গুমাই বিল ডুবে গেছে। বিলের আশেপাশে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশনের বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, এবার বেশির ভাগ কৃষক বন্যা সহনশীল জাতের আমন চারা লাগিয়েছেন। টানা কয়েকদিন পানি থাকলেও এসব চারা নষ্ট হবে না। গুমাই বিলের পানি যাতে নেমে যায় সেজন্য গুমাই বিল সংলগ্ন কাটাখালী জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশন হয় সে নজর রাখা হচ্ছে। আমরা বৃষকওে পাশে আছি। তাদের সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে।