গাজার যুদ্ধ পাল্টে দিচ্ছে ইউরোপীয় রাজনীতি

5

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেনের ঘোষণা ইউরোপীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এই পদক্ষেপের ফলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের প্রতি দেশগুলোর দৃঢ় সমর্থন কমছে বলে হাজির হচ্ছে। তিনটি দেশের বুধবারের এই ঘোষণায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ফলে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান বিভাজন স্পষ্ট হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র বিরোধিতার পরও ইউরোপীয় দেশ তিনটি এই দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। যা ইসরায়েলের নীতি-বিশেষ করে গাজায় ও পশ্চিম তীরে দেশটির কর্মকাЖনিয়ে ক্রমবর্ধমান হতাশার বহিঃপ্রকাশ। এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে অবস্থান পুনর্গঠন করতে পারে। যদিও অভ্যন্তরীণ বিভাজন রয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে ইউরোপ ছিল ইসরায়েলের নির্ভরযোগ্য মিত্র। মহাদেশটির দেশগুলো দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ও বৈজ্ঞানিক অংশীদারিত্ব বজায় রেখে আসছিল। তবে গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং এর ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকট ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিতে ক্ষয় ধরিয়েছে। অনেক ইউরোপীয়দের কাছে ইসরায়েল এখন ভুক্তভোগী নয়, আগ্রাসন চালানো দেশ।
ক্রমবর্ধমান বিভাজন
স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃত দেওয়ার সিদ্ধান্তটি মূলত প্রতীকী হলেও তা ইসরায়েলের প্রতি তীব্র তিরস্কার। এই দেশগুলো নিয়মিত ইসরায়েলি কর্মকা্ন্ডের সমালোচনা ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলে আসছিল। ইসরায়েলে হামাসের হামলার নিন্দার পাশাপাশি গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানেরও বিরোধিতা করেছে তারা। যে অভিযানে গাজায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসামরিকের মৃত্যু ও অবকাঠামোগত বিপর্যয় হয়েছে।
ইউরোপের অপর দেশগুলো যদি তাদের পথ ধরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ পাল্টা ভারসাম্য তৈরি করবে। ওয়াশিংটন দাবি করে আসছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার ফলশ্রুতিতে হওয়া উচিত। এমন পরিবর্তন ইসরায়েল ও ইউরোপের মধ্যকার বিরোধ গভীর করবে, ক‚টনৈতিক সম্পর্ক জটিল হয়ে পড়তে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ক্রমবর্ধমান সম্মিলিত কণ্ঠ দেখছি। অতীতে যারা ইসরায়েলের সমর্থক ছিল তারা এখন অন্য দিকে যাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ আমরা মনে করি এটি ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা বা টিকে থাকার পক্ষে সহায়ক নয়। হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিকের মতো দেশ এখনও ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থনে অনড় রয়েছে। তবে বেলজিয়ামের মতো দেশ সমালোচনা জোরদার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাদজা লাহবিব গাজায় অপরাধের বিচারের ওপর জোর দিয়েছেন।
হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিকের মতো অস্ট্রিয়াও ইসরায়েলকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। যা ইস্যুটি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জটিল ও বিভাজিত অবস্থানের প্রতিফলন। ইইউতে পররাষ্ট্রনীতি এখনও দেশগুলোর অধিকারে রয়েছে। বøকের অবস্থান পরিবর্তন করতে হলে সর্বসম্মতি প্রয়োজন হবে। কিন্তু বর্তমান বিভাজনের কারণে তা বেশ কঠিন বলেই মনে হচ্ছে।