গণহত্যাকারীদের ক্ষমার অধিকার কারও নেই

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সরকার ‘সুস্পষ্ট গণহত্যা’ চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, এ গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই। রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির দেশে ‘হিংসার ও প্রতিশোধের রাজনীতির’ অবসান চেয়ে বলেছিলেন, দল হিসেবে আমাদের ওপর যা করা হয়েছে, আমরা আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষমা করে দিলাম।
ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, এই গণহত্যা ক্ষমা করার কারও অধিকার নেই। আমরা বলেছি আমরা প্রতিশোধ নেবো না, এর মানে হচ্ছে আমরা নিজের হাতে আইন তুলে নেবো না। কিন্তু যিনি সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং তাকে শাস্তি পেতে হবে। তিনি বলেন, গণহত্যার বিচার করতে হবে এবং গত সাড়ে ১৫ বছরে যেসব অপরাধ করা হয়েছে, তার বিচার করতে হবে।
সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকিয়ে রেখে হয়রানি করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে গুম করা হয়েছে, যার প্রকৃত সংখ্যা জাতির কাছে অজানা। ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে আমাদের কর্মীদেরকে হত্যা করা হয়েছে।
আমাদের প্রত্যেকটা রাত প্রত্যেকটা দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত ছিল। আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসসহ মহানগরী ও জেলা এমনকি তৃণমূলের সব অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অফিসের সবকিছু লুট করা হয়েছে। কোনও জায়গায় আমাদের সামান্য স্পেস দেওয়া হয়নি। আমাদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে।
হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো আমাদের দেশে আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছে। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয় বিরোধীদল বিএনপি, উলামায়ে কেরামসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের ওপর একই ধরনের তান্ডব চালানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ওপর ভিন্ন মাত্রায় তান্ডব চালানো হয়েছে। বলেন শফিকুর রহমান।
তিনি উল্লেখ করেন, বয়স্ক আলেমদেরকেও হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই জালিমরা ক্ষান্ত হয়নি বরং আলেমদের মুখ না খুলতে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
জামায়াত আমির আরও বলেন, বিগত সরকার ক্ষমতার লোভে জেদের বশবর্তী হয়ে সুস্পষ্ট গণহত্যা চালিয়েছে। সরকার শুধু স্থলভাগেই নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যা করেছে। স্বাধীন দেশে পরিচালিত এই গণহত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই, খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দল হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর পরে আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে সরকার দিশেহারা হয়ে আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার অধিবেশনে কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি চাওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। দেশ স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্তি লাভ করে। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছে।
এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তাদেরকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়ার জন্য মজলিসে শুরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহŸান জানাচ্ছে।