খাগড়াছড়িতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী

4

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

খাগড়াছড়িতে টানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। টানা এই বৃষ্টির কারণে চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে খাগড়াছড়ি সদর ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চেঙ্গী নদীর পানি বাড়ায় পানছড়ির অনেক এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, পাহাড়ি ঢলে মাটিরাঙ্গা, রামগড়, দীঘিনালাসহ জেলার ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
দীঘিনালার মাইনী নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে সাজেক-দীঘিনালা সড়ক। সাজেকে আটকা পড়েছেন ২ শতাধিক পর্যটক। খাগড়াছড়ির সাথে পানছড়ি ও মহালছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
খাগড়াছড়িতে গেল ২৪ ঘন্টায় ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৪৯ দিনের মধ্যে এ নিয়ে চারবার পানি বন্দী হলো খাগড়াছড়িবাসী। এ থেকে উত্তোরণে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই ব্যবস্থাগ্রহণে গণশুনানীর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানান খাগড়াছড়ির সচেতনমহল।
খাগড়াছড়িতে চলতি সপ্তাহজুড়ে (গত শনিবার থেকে) টানা বর্ষণের পর বুধবার দুপুর নাগাদ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে বানভাসি মানুষ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার বিষয়ে আশান্বিত হয়েছিলো। কিন্তু বুধবার রাতভর আকাশভাঙা ভারী বৃষ্টি এবং উজানের পানি নেমে প্লাবিত হয়েছে খাগড়াছড়ি শহরের নতুন নতুন এলাকাও। আবারও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়েছে সহস্রাধিক পরিবার। এ নিয়ে চারবার ডুবলো চেঙ্গি ও মাইনি নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজারো পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর না হতেই পানির তীব্রতা এতোটাই বেড়েছিলো যে; মূহুর্তেই বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলায় পানি ডুকে যায়।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আমান হাসান এবং সদর কমান্ডার লে. কর্ণেল আবুল হাসনাত জুয়েল নিজেই মাঠে নেমে পড়েন। তাঁরা বেশকিছু এলাকায় আটকেপড়া শিশু-নারী ও বয়োবৃদ্ধ মানুষকে নৌকায় করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ সরেজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। চেংগী নদীর পানি বুধবার কমে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে পরিবারগুলো থেকে ঘরে ফিরে গিয়ে ঘর পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু রাতের প্রচন্ড ভারী বৃষ্টিতে আবারও পানিতে তলিয়ে যায় বাড়িঘর। ফের আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান হয় পরিবারগুলোর।
পৌরসভার মহিলা কলেজ সড়কের সবজি বাজার, গঞ্জপাড়া, গরু বাজার, শান্তিনগর, শব্দ মিয়া পাড়া সড়ক, মুসলিম পাড়াসহ সাতটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির কারণে ও পাহাড়ি মাটি পড়ে সাজেক সড়কে ৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের যান চলাচল।
নতুন করে ডুবেছে খাগড়াছড়ি গেইট সড়ক, কলেজ রোড, মহালছড়ি সড়ক, দীঘিনালা-লংগদু সড়ক, বাঘাইছড়ি-সাজেক সড়ক। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং-তবলছড়িসহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পানিতে ডুবে গেছে। একইভাবে পানছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। দীঘিনালা উপজেলার মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে মেরুং ইউনিয়নের নিচু এলাকার বেশিরভাগ গ্রাম।
জেলাশহরের পৌরসভার পাশাপাশি জেলা বিএনপি ও খাগড়াছড়ি মানবকল্যাণ সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন এখন বন্যার্তদের মাঝে খিচুড়ি ও শুকনা খাবার বিতরণ করছে।
পানিবন্দী সাধারণ মানুষেরা জানান, বার বার শহরের মধ্যে পানি উঠার কারণ হচ্ছে নদী-নালা, খাল, ড্রেন সংস্কার না করা। আর টানা যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পরিস্থিতি এতোটা ভয়াবহ হতো না।
খাগড়াছড়ি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ্ জানান, যুব রেড ক্রিসেন্টের সব কর্মীরা বানভাসি মানুষের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতামূলক ভ‚মিকা পালন করছে। সোসাইটির জাতীয় অফিসে জরুরিবার্তার মাধ্যমে মানুষের দুর্ভোগের ভয়াবহতা জানানো হয়েছে। যদি কেন্দ্র থেকে ত্রাণ সরবরাহ করা হয়, তা খুব কম সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো জেলার জন্য ৪০০ মেট্রিক টন, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার জন্য ১২ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২ হাজার ৫৫০টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দী পরিবারের জন্য শুকনো খাবার মজুদ রাখা আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে।