কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে গরু পাচার

3

বান্দরবান প্রতিনিধি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলছে সংঘাত। এপারে সীমান্ত পরিস্থিতিতে কড়া পাহারায় রয়েছে বিজিবি। কিন্তু তারপরও থেমে নেই অবৈধ গরু পাচার। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ শতাধিক গরু-মহিষ আসছে বাংলাদেশে। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে ওপারের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরাকান আর্মির মদদে দুই দেশে গরু-মহিষ ছাড়াও মাদকদ্রব্য পাচার করছে চোরাকারবারিরা। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে এই পাচার ব্যাপক হারে বেড়েছে। অবাধে গবাদি পশু আসায় কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে সীমান্ত এলাকার খামারিদের। শুধু সীমান্ত নয়, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলা ছাড়াও পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে মিয়ানমারের গরু কারনে দেশীয় গরু ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে।
খামারিদের অভিযোগ, সীমান্তের ওপারে উত্তেজনা চললেও অদৃশ্য কারনে নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত উন্মুক্ত রয়েছে। বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-বাইশফাঁড়ি, নিকুছড়ি, ফুলতলী, আশারতলী, কম্বনিয়া, ভাল্লুকখাইয়া, বামহাতিরছড়া, দোছড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ শতাধিক গরু আসছে এপারে। আর এসব গরু পাচারকে কেন্দ্র করে পথে পথে চলছে চাঁদাবাজি। এই চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কতিপয় সদস্যরাও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মিয়ানমারের গরু পাচার নিয়ে সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে চোরাকারবারিরা বেশ সক্রিয়। তাদের হাতে রয়েছে অস্ত্র। মূলহোতা প্রভাবশালী কয়েকজন হলেও তাদের নেতৃত্বে রয়েছে কয়েকশ সদস্য। যারা প্রতিদিনই মিয়ানমার থেকে শত শত গরু-মহিষ সীমান্ত দিয়ে বাঁধাহীনভাবে নিয়ে আসছে। এসব পকু মজুদ করা হচ্ছে গর্জনিয়া বাজার, চাকঢালা বাজার, ঈদগাঁও, ঈদগড় ও চকরিয়ায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামলেই সীমান্ত দিয়ে চোরাই গরু আনার কাজ শুরু হয়। এরপর এশার নামাজের পর রাস্তাঘাটে লোকজন কমে গেলে গরুর পাল প্রশাসন ও বিজিবির টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে কারবারিরা। স্থানীয় শ্রমিক ও খেটে খাওয়া লোকজনকে দিয়ে প্রতি গরু সীমান্ত থেকে পার করা হয় ২ হাজার টাকায়। পরবর্তী মিয়ানমার থেকে আনা চোরাই গরু প্রথমে পাহাড়ে ও খামারে মজুদ করে চোরাকারবারিরা। পরবর্তী সময় গর্জনিয়া ও চাকঢালা বাজার ইজারাদার থেকে প্রতি গরু ২ হাজার টাকায় রশিদ সংগ্রহ করে খামারির গরু পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে এসব গরু। বাজারের রশিদ থাকায় এসব চোরাই গরু জব্দ করতে পারে না আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।
অভিযোগ রয়েছে, বাজারগুলোতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কিছু লোক রয়েছে। যারা প্রতি গরু থেকে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে বিশেষ জায়গায় পৌছে দেন।
এদিকে চোরাই গরু পাচারের কারবারে মুনাফা বেশি হওয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও ছুটছেন সীমান্তের চোরাই পথে। মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে কর্তব্যরত সদস্যদের মাথাপিছু ৫০০ টাকা দিয়ে গরু-মহিষ বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। আর এ কাজে একাধিক সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাত-দিন কাজ করছেন বাঁধাহীনভাবে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকার বৃহত্তর বাজারগুলো চোরাকারবারীরা কৌশলে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যেখানে অবৈধ গরু বিক্রয় রশিদ দিয়ে বৈধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, চোরাকারবারিদের লাগাম টানতে চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্স কাজ করছে। বিজিবি চেষ্টা করছে চোরাকারবারিদের রুখতে। এর পাশাপাশি ইউএনও ও জনপ্রতিনিধিরা সবাই আমাদের সহায়তা করছেন। আমরা সবাই মিলে চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এটা বন্ধ করতে চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো. ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসছে। যার কারনে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন হাজার হাজার খামারী। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত পথে গরু আসা বন্ধে কঠিন নজরদারির দাবি জানান তিনি।