কোটা নিয়ে এখনও আন্দোলন উসকানিতে

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

আদালতের আদেশের পরও কেন কিছু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাইছে, তা বুঝতে পারছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘এই আন্দোলনের ওপর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ভর করেছে। শিক্ষার্থীরা কার বিপক্ষে আন্দোলন করবে? সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ তো তাদের পক্ষেই আছে। এরপরে আন্দোলন চলমান থাকা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো গোষ্ঠী বা মহল এই আন্দোলনকে উসকানি দিচ্ছে’।
কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা জারি এবং হাই কোর্টের রায়ে কোটা সংস্কারের পথ খোলার পরও আইন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন কাদের।
আন্দোলনকারীদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে এ ধরনের সকল কর্মসূচি পরিহার করে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান’।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা তুলে দিয়ে জারি করা পরিপত্র গত ৫ জুন হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার পর সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে, অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা মাঠে নামে। পরে তারা কোটা সংস্কারের দাবি সামনে নিয়ে আসে। খবর বিডিনিউজের
দাবি আদায়ে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতি দিনই বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি চরমে ওঠে।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার কোটা নিয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে দিয়েছে আপিল বিভাগ। তারপরও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
স্থিতাবস্থা জারির পরদিন গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মত তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামেও সড়ক অবরোধ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। ঢাকার শাহবাগেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে কোনো হাঙ্গামা ছাড়াই চার ঘণ্টার মত তারা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন।
এদিকে জুন মাসে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার বাস্তবায়নের অংশ প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। সেখানে ২০১৮ সালের আগে চালু থাকা সব কোটা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকার প্রয়োজনে কোটার হার বা অনুপাত পরিবর্তন করতে পারবে বলে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের তার বিবৃতিতে বলেন, আদালতের ওই আদেশের পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান থাকার যৌক্তিকতা নেই। বরং শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চলমান রাখায় সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনগণ এই আন্দোলনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়লে তরুণ শিক্ষার্থীদের উপর তারা আস্থাহীন হয়ে পড়বে’।
এই আন্দোলনে বিএনপি ও সমমনাদের সমর্থনের বিষয়ে ইংগিত করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক মহল শিক্ষার্থী ও জনগণের মধ্যে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। আমরা বিশ্বাস করি না, কোমলমতি সকল শিক্ষার্থী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করতে চায়। শুধু যারা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তারাই আদালতের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে’।
তিনি বলেন, ‘যে কোনো আন্দোলন হলেই বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের দোসররা সেটাকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় যাওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। এখন তারা কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ তাদের উপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস ও উগ্র-জঙ্গিবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল’।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির নেতা দÐপ্রাপ্ত পলাতক আসাসি তারেক রহমান হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার করে লন্ডনে বিলাসী জীবনযাপন করছে। দেশের সাধারণ জনগণের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এই দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বের অপরাজনীতির কারণেই বার বার জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বিএনপি। সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনেই তারা সফল হতে পারেনি। তাই যখনই অরাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত হয় সেটাকে পুঁজি করে রাজনীতি করার অপচেষ্টা করে বিএনপি’।
দেশের মানুষের যৌক্তিক দাবির প্রতি আওয়ামী লীগ ‘সর্বদা আন্তরিক’ মন্তব্য করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোনো যৌক্তিক দাবি কখনোই আওয়ামী লীগের কাছে উপেক্ষিত হয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে একটি জনকল্যাণকর উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে’।
তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কাদের বলেন, ‘আপনারা কারো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহারের শিকার হবেন না। চূড়ান্ত শুনানিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষের আইনজীবীর আরও যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত চ‚ড়ান্ত শুনানির মাধ্যমে এ বিষয়ে নিষ্পত্তি করবে। আদালত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অসন্তোষের বিষয়সমূহ চুড়ান্ত শুনানিকালে আমলে নিয়ে বাস্তবসম্মত চ‚ড়ান্ত রায় প্রদান করবেন এবং বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে’।