কোটা আন্দোলন : প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষে

15

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী

একটা সময় ছিল যখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রকাশ সাকা চৌধুরীর গায়ে কেউ টোকা দিবে তা ভাববার মতো পরিবেশ ছিল না। কেউ ভাবেনি। ভাবতে পারে নি। সেই সাকা চৌধুরীর ফাঁসি হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতা এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে।
একটা সময় ছিল সেনাবাহিনীর একজন নন কমিশন সদস্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙ্গুল তোলা যেতনা। কিন্তু এই দেশেই সেনাবাহিনীর অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার বিচার হয়েছে সামরিক-বেসামরিক সরকারের আমলেই। দশ ট্রাক অস্ত্র চালান থেকে ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা কিংবা অন্য অনেক ঘটনায় আলোচিত হয়েছেন সেনাবাহিনীতে একসময়ের প্রভাবশালীরা। অথচ সেনাবাহিনী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ধন।
মহান মুক্তিযুদ্ধকালে সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা মরণপণ যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধ সংগঠনে, প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব প্রদানে তাঁরা কাজ করেন। আমাদের এই প্রিয় সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার প্রক্রিয়া পুরোনো। আজও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।
হাল আমলের কোটা আন্দোলনকারীরা কী ভুলে গেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদা ও অস্তিত্বের প্রতীক প্রিয় এই সেনাবাহিনীতেও তথাকথিত মেধার জোরে বাংলাদেশ বিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা অনুপ্রবেশ করেছিলেন? সেই কথা একটু পরেই আলোচনায় আনবো। আপাতত , ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ বলি।
এই সেই দেশ, এই দেশেই কক্সবাজারে এক প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তার পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগে মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনকালে সেনাপ্রধানের সামনে পুলিশ প্রধানের লাঠি ঘোরানোর দৃষ্টিকটু চিত্রটি অনেকের চোখে পড়ে।
সেই পুলিশ প্রধান বেনজির এখন হাওয়া ! তার হাজার কোটি টাকার সম্পদে এখন মাছি উড়ছে !
বেনজিরের মত স্মার্ট ভিশনারি পুলিশকর্তা কেন যে কোন চক্করে পড়ে এসব করেছেন, তা এখনো অনেকের ভাবনায় আসেনা।
এদেশে একটা সময় ছিল মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলাও যেত না।
কিন্তু এদেশে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরই জয় হয়েছে। কতিপয় ভুয়া তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া বৃহত্তর আঙ্গিকে মুক্তিযোদ্ধারা সর্বোতভাবে সবার ( তাও কতিপয় রাজাকার বা তাদের উত্তরাধিকার ছাড়া ) শ্রদ্ধার পাত্র। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা না করা, ঢিমেতালে প্রক্রিয়া সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পথে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভেতরে বাইরে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এমনকি শহীদ জয়া জাহানারা ইমামের পদক্ষেপ থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়েও উঠেছে ক্ষণে ক্ষণে নানা প্রশ্ন।
কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়েও নতুন প্রজন্মের কাছে, দেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এর গভীরতা, গুরুত্ব অনেক বেড়েছে।
তবে এখন বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের টানা প্রায় ১৬ বছরেও এসে একটি প্রজন্মের স্বল্প সংখ্যাক তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন ! তারা এর মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের মুক্তিকামি মানুষের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন এই বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন।
কোটা প্রথার বিরোধিতা নিয়ে যত যুক্তিই দেওয়া হোক না কেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম যুক্ত করে নেতিবাচক কিছু বলা কাক্সিক্ষত নয়। সভ্য রাষ্ট্রে তা মেনে নেয়া যায় না।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন না করলে বাপ-দাদাদের মত হালের এই ‘মেধাবীরা’ও পাকিস্তানিদের জুতো পালিশ করতেন। অথচ এই মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত চাদরে মাখা এই বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানিদের কাছে মডেল।
অন্য অনেক কোটা থাকা সত্তে¡ও শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের উত্তর পুরুষকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রশ্নে কেন তথাকথিত আন্দোলনকারী ও তাদের আড়ালের মানুষগুলোর এত ঝাল, তা কি রাজনীতি সচেতন মানুষ বুঝেন না ?

মানুষকে এত বোকা ভাবা ঠিক নয়।
একটা সময় ছিল জামাত ইসলামের নিয়ন্ত্রিত ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে তাদের সকল প্রতিষ্ঠানে, এমনকি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানেও জামাত শিবির না করলে কিংবা তাদের আমির- নায়েবে আমিরদের সুপারিশ ছাড়া কারো চাকরি হয়নি।
চলমান সময়েও দেশের কোন কোন ব্যাংকে এবং স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আঞ্চলিক কোটা প্রবলভাবে বিদ্যমান।
এখন যারা কোটা প্রথা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাটো করে বা অপমানমূলক কথা বলছেন , জামাতিদের ঐ দলীয় কোটা কিংবা আঞ্চলিক কোটা নিয়ে আপনারা কি কেউ মুখ খুলেছিলেন? নাকি তখন শরাবে মত্ত ছিলেন?
বাংলাদেশের একশ্রেনির ধর্মীয় রাজনীতি, ধর্মীয় জিগির তোলা আন্দোলন কিংবা ধর্মাশ্রিত রাজনৈতিক অপশক্তির মদদে রাজপথের তথাকথিত সুশীল নাগরিক আন্দোলনগুলো সাধারণ ধর্মভীরু বা দেশপ্রেমী মানুষকে বিভ্রান্ত করারই প্রয়াস। আবার কখনো কখনো অতি যৌক্তিক জনস্বার্থ ইস্যুও রাজনৈতিক ইন্ধনের অভিযোগে সাফল্যের কিনারা পায়নি।
অতি সা¤প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে যুদ্ধ অপরাধে অভিযুক্ত জামাত ইসলামীর পক্ষে চলে যাওয়া আলোচিত কবি আল মাহমুদের জন্মদিনকে ঘিরে কিছু আলামতে মুক্তিযুদ্ধের উত্তর প্রজন্মের একজন নাগরিক হিসেবে বিস্ময় ও যুগপৎ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে মনে।
কোটা প্রথার বিরোধিতার নামে মুক্তিযোদ্ধাদের বা তাদের পরিবারকে অসম্মান জানানোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হল্কাকারী গোষ্ঠী কার্যত বাংলাদেশকেই চ্যালেঞ্জ করছে ।
একশ্রেনির সমঝদার ও প্রগতিশীল’ সাহিত্য অনুরাগী বা সাহিত্যাঙ্গনের প্রতিনিধি দাবিদার লোকজনেরা আল মাহমুদকে ঘিরে পিরিতির ‘রসময়’ দাদা কিংবা বড়দা’র ভুমিকা নিয়েছেন।
আল মাহমুদকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পীর ফেরেস্তা বানানোর আয়োজন করেছেন যেন!
রস আর মধু দিয়ে যতই তার কাব্যগুণ বা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকাকে ইতিবাচক করার চেষ্টা করুন না কেন , মূলত জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটুকু পর্যন্ত নিজের বদলে যাওয়া কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ না করে, ভুল স্বীকার না করে ওই কবি বাংলাদেশের বিপক্ষে থেকেই বিদায় নিয়েছেন। এত বছর পরে এসেও আল মাহমুদের এমন গুণকীর্তনকারী আমাদের কথিত বোদ্ধাজনদের (!) কাছে জানাতে চাই, আল মাহমুদকে নিয়ে যখন আপনাদের এতই মায়া কান্না, তাহলে গোলাম আযম এর পক্ষে সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন না কেন ? আপনারা অতিথি হিসেবে যেসব সভা সমাবেশ বা অনুষ্ঠান মঞ্চে যান, সে সবে কেন গোলাম আযম এর পক্ষে কথা বলেন না ?
আল মাহমুদ যদি আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হন, তাহলে গোলাম আযমও গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা। কেননা, গোলাম আযম ভাষা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা হিসেবেই বাংলা ভাষার পক্ষে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন।
কিন্তু গোলাম আযম যেহেতু পরবর্তীতে এসে বাঙালি চেতনাবোধ কেন্দ্রিক স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে চলে যান, এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের , যুদ্ধাপরাধীদের ‘মাস্টার মাইন্ড’ ছিলেন , সেহেতু গোলাম আযম পরিত্যজ্য।
একইভাবে আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধকালে পালিয়ে কলকাতায় যান আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিজের অবস্থান যতই রাখেন বলে দাবি করা হোক না কেন, মূলত নিজের সেই অবস্থান থেকে সরে তিনি তার নিজের মধ্যে ক্রিয়াশীল প্রগতি (!) ও অসা¤প্রদায়িক মন এবং সৃষ্টিশীলতাকে নিজেই অস্বীকার করেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মান্ধতা বা ধর্মে অবিশ্বাসীদের এতে প্রভাব কতটুকু, তার বোম ফাটানো প্রমাণ তুলে এনেছেন ‘ প্রেস ইন্সটিটিউট ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ-পিআইবি মহাপরিচালক কবি ও সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে অবস্থান নেওয়া একদার অসা¤প্রদায়িক কবি
ফরহাদ মজহারের ‘এবাদতনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কয়টি পক্ষে তুলে এনেছেন তিনি সামাজিক মাধ্যমে ।
আজান নিয়ে কবি ফরহাদ মজহার লিখেছিলেন –
‘আজান’
“তুমি কি বধির প্রভু ?
নাকি কানে তুলা দিয়া থাক ?
এভাবে হুংকার দিয়ে পাঁচবার মাইক্রোফোনে
কেন মোয়াজ্জিন হাঁকিতেছে ? …
( কাব্যগ্রন্থ : এবাদতনামা, পৃষ্ঠা ৬৯। )

পবিত্র আজান নিয়ে যেই কবি এত বেশি বিরক্তি প্রকাশ করেন, সেই তিনি হয়েছেন এখন ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সা¤প্রদায়িক শক্তির অন্যতম উস্কানি দাতা। মামুনুল হকদের কথা নাইবা বললাম।
এভাবেই বাংলাদেশ নন ইস্যুকে ইস্যু করা, নিজের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন বা ¯েøাগানের ফল্গুধারা বইয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়।
যেকোনো আন্দোলনেই যার বা যাদেরই নেপথ্যের ইন্ধন থাকুক না কেন , তবুও ভাবতে হবে, আলোচিত কোটা বিতর্ক তোলা প্রজন্মটি কেন এত মরিয়া হয়ে উঠেছে ?
এই প্রশ্নটি বিশ্লেষণের দাবি রেখেই এবার খানিকটা এই প্রজন্মের জন্যেই কিছু বিষয়ে দৃষ্টি ফেলতে চাই। এবং একটু অন্যরকম করেই বলতে চাই।
অবশ্য এখন কোটা ইস্যুতে মুক্তিযোদ্ধাদের মান-অপমান প্রশ্ন এলেও হাইব্রিড বা অন্তরে ‘পাকি-প্রেমীদের’ অনেকেই নিশ্চুপ বধির বোবা কালা হয়ে আছেন ! তাদের এই রহস্যজনক নীরবতার ভাষাও সদাশয় সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব যত দ্রুতই বুঝতে পারেন, ততই মঙ্গল।
প্রসঙ্গত বলতে চাই,
মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নামে যারা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে না, তাদের সন্তানদেরও চাকরি দেয়া হয়েছে। তখন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা বঞ্চিত ছিলেন। তখন আমাদের তথাকথিত এই মেধাবীদের বাপ-চাচারা কিংবা তাদের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের অবস্থান কেমন ছিল ?
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং যুদ্ধাপরাধের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে আদালত দোষী সাব্যস্ত করে জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে। সেই গোলাম আযমের নির্দেশে যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানিদের সহায়তায় রাজাকার, আল বদর, আল শামসরা শুধু নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের নয়, সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও হত্যা এবং নির্যাতন করে।
সেই গোলাম আযমের পুত্র আব্দুল্লাহিল আমান আযমি স্বাধীন দেশে সেনাবাহিনীর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল পদ পেয়েছিলেন কিভাবে ? গোলাম আযমের এই পুত্রের ‘মেধা’ ও ‘যোগ্যতা’র কাহিনী জিয়াউর রহমানের ‘ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেড়া গেঞ্জি’র কাহিনীর মতো শুনতে পেতাম।
কিন্তু স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বিরোধী ‘রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধের শিরোমনি’র সন্তান কিভাবে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীতে চাকরি পান, এবং উর্ধ্বতন পদে আসীন হন, কেউ কি ভেবে দেখেছেন? তথাকথিত মেধার জোয়ারের নামে হল্কা দেওয়া ‘মেধাবী পুত্ররা’ এ বিষয়ে কি বলবেন?
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে না থাকলে কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনার পক্ষে পারিবারিকভাবে আরএস, বিএস ঠিক না থাকলে তিনি যতই মেধাবী হন না কেন, তার বা তাদের চাকরি নিষিদ্ধ করা উচিত। একইভাবে এখন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে কথা বলছেন, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
প্রজন্মের একটি অংশ কিংবা তাদের সমর্থনদানকারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান প্রদর্শনে যতটা মরিয়া, বিসিএস প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া ড্রাইভার আবেদ আলীর বিচারের দাবিতে কি ততটা আওয়াজ দিয়েছেন ? ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে যারা আজ সরকারি কর্তা, তাদের চিহ্নিত করতে কোন দাবি নেই কেন?! তাদের চিহ্নিত করার বদলে তাদের সহকর্মী হওয়ার মনোবৃত্তি কেন আজ এই কথিত মেধাবীদের ?
অথচ এই আবেদ আলী বা তা তার হাত থেকে প্রশ্ন নিয়ে সরকারি কর্তা বনে যাওয়ারাই আজ জাতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার শত্রæ, মুক্তিযোদ্ধারা নন।
অন্যদিকে, কোটা বাতিলের দাবিদারদের স্লোগানে কড়া ডান শুধু নয়, বামেদের উত্তাপও আছে। ক্ষমতাসীনদের অন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদেরও আছে প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সমর্থন।
এরা নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, জেলা কোটা, ইত্যাদির বিষয়ে তেমন উচ্চবাচ্য না করলেও তাদের সকল আপত্তি যেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে ।
অথচ মুক্তিযোদ্ধারা জীবন ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন না করলে আজকে রাজপথে দাবি জানানোর মত স্বাধীনতাও থাকতো না।
অবস্থা দৃষ্টে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি শিক্ষা খাতে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য এমন আস্ফালনের আড়ালে আছে অন্য কিছু?
নতুবা এই তারুণ্য কেন এমন ভুল নিশানায় ব্যস্ত ?
তবে কি চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তরুণদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহŸান তৃণমূল, নগর বা জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়েও ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পারেননি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগও ? না কি ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন শতাব্দীর ভ্যানগার্ড খ্যাত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে অনুপ্রবেশকারীদের কবল থেকে রক্ষা করতে না পারার ব্যর্থতা শিক্ষাঙ্গনকেও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে ?
না কি, ২০১২-১৩ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পক্ষে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য দেশজুড়ে গড়ে ওঠা আন্দোলন এক যুগ যেতে না যেতেই ক্ষমতাসীনদের অন্দরে-বাইরে হাইব্রিড কিংবা দেশবিরোধী শক্তির অনুপ্রবেশে চেতনার ধারাও বদলে যেতে শুরু করেছে ছাত্র – জনতার কাছে ?
এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারকেই। যখম বুঝে মলম দিতে হবে।

লেখক : সাবেক সহ-সভাপতি, বিএফইউজে – বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাবেক সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন -সিইউজে