কোটা আন্দোলন ঘিরে সরকারের সতর্ক বার্তা

12

পূর্বদেশ ডেস্ক

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিসহ কিছু দল কোটা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এটিকে রাজনীতিকরণ করছে। পাশাপাশি কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলতে চাইলে সেটা আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের খায়েশ পূর্ণ হতে দেবো না।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন
শিক্ষার্থীদের ধৈর্যশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে কাদের বলেন, এ মুহূর্তে কোনো প্রকার কোটা সংরক্ষিত নেই। এ বিষয়ে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি দেবেন। তিনি শিক্ষার্থীদের আদালতের প্রতি সম্মান রেখে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানান।
অর্ধযুগ আগে সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার কী প্রভাব পড়েছে সে বিষয়ে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই সময়ে নারীরা পিছিয়ে পড়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে যেসব তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে, সেগুলোকে ‘অবাস্তব ও বিভ্রান্তিকর’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেছেন, বৈচিত্র্যময় সমতা ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা অর্জনে কোটার গুরুত্ব রয়েছে।
সড়ক মন্ত্রী বলেন, কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার পরে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন ও সফলতার হারে পিছিয়ে পড়েছেন নারীরা। কোটাযুক্ত বিসিএস-এর তুলনায় কোটামুক্ত বিসিএস-এ নারীরা পিছিয়ে পড়েছে ৩.৪৩ শতাংশ।
একটি বিসিএস-এ কোটা না থাকায় পুলিশের ক্যাডারে মাত্র চার জন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছেন। ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে মাত্র দুই জন নারী।
কোটামুক্ত একটি বিসিএস-এ ২৪টি জেলার কোনো প্রার্থী পুলিশ ক্যাডারে চাকরি পায়নি, ৫০টি জেলায় নারীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সব চাকরির হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকা অবস্থায় শতকরা ২৬ ভাগের উপরে নারী প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছিল। এরপর কোটা তুলে দেওয়ায় এই হার শতকরা ১৯ ভাগে নেমে এসেছে।
কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীরা সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোনো কোনো পরীক্ষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজন প্রার্থীও নিয়োগ লাভের সুযোগ পায়নি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিয়েও যে সমস্ত তথ্য আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে তা অবাস্তব এবং বিভ্রান্তিকর। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোটাযুক্ত পদ্ধতিতে মেধায় নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ। কিন্তু বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় শতকরা ৬৬.২ ভাগ প্রার্থী মেধাভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছে।
কোটায় নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীরাও প্রায় সমান মেধাবী জানিয়ে সড়ক মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কোটায় যারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে তারাও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একই মানদন্ডে অর্থাৎ একই প্রিলিমিনারি প্রশ্ন, লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সমান যোগ্যতার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।
ধৈর্য ধরতে হবে : কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শও দেন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবিলম্বে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার জন্য পুনরায় আহবান জানাচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
তরুণদের শক্তি এবং আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে তিনি বলেন, এই শক্তি ও আবেগকে পুঁজি করে কোনো অশুভ মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
যারা কোটা আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চায় তাদের খায়েশ পূরণ হতে দেব না।
কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্ররোচনা দিচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, অশুভ মহল ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগকে পুঁজি করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে এই ধরনের কর্মকান্ড রাষ্ট্র বা দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়।
বিএনপিসহ কিছু দল শিক্ষার্থীদের ‘রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলা’র পাঁয়তারা করছে বলেও মন্তব্য করে কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলন চেষ্টা করছে বিএনপি। ফখরুল বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের কোটার দরকার নেই।’ তাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের সম্মান নেই। কোটা বিরোধিতা করে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতার প্রমাণ দিয়েছে আবারও।