কোটা আন্দোলনকারী-পুলিশ সংঘর্ষ, ২০ জন আটক

5

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড় ও আন্দরকিল্লা এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ২০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। গতকাল সোমবার বিকেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ পূর্বদেশকে বলেন, ‘জামালখান ও চেরাগী মোড় থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ২০ জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে যারা সাধারণ ছাত্র তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে। যারা নাশকতায় জড়িত তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। সংঘর্ষে এসি কোতোয়ালীসহ ৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা রুজু প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
আটকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন বেসরকারি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমন, বাকলিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র আজমাঈন করিম নিহাল, গাছবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী জুলহাজ হোসেন এবং চট্টগ্রাম আইন কলেজের শিক্ষার্থী মো. নজরুল। আটক অন্যদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বেলা ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে আসার আগেই সেখানে সতর্ক অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশস্থলে যেতে না পেরে চেরাগী মোড়ে খন্ড খন্ডভাবে এসে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সেখানে জড়ো হন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়,স্কুল-কলেজের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী।
অপরদিকে চেরাগী মোড়ের আরেক পাশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নেন। সেখানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকেও দেখা যায়। কাউন্সিলরের নেতৃত্বে প্রায় ১০০-১৫০ ছাত্রলীগ-যুবলীগকর্মী সেখানে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এসময় যুবলীগকর্মীরা ৪-৫ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আটককৃতদের ছাড়াতে গেলে তাদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে শিক্ষার্থীরা রাস্তার অন্য পাশে সরে গিয়ে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় নিজেদের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডে চার পুলিশ সদস্য মাথায়, চোখে গুরুতর আঘাত পান। তারা হলেন কোতোয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার অতনু চক্রবর্তী, এসআই মোশারফ হোসেন হাবিব, এসআই বোরহান উদ্দিন ও এসআই মেহেদী হাসান শুভ। পাশাপাশি দুইজন কনস্টেবলও সামান্য আহত হন। পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ৬-৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে। বিকেল ৫টার দিকে আন্দরকিল্লা মোড়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হন দৈনিক দেশ রুপান্তরের ফটো সাংবাদিক আকমল হোসেন ও নিউজ ২৪’র ক্যামেরাপার্সন মো. আবু জাবেদ।
সিএমপি’র উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কারফিউ চলাকালীন বিক্ষোভ মিছিল, সভা নিষিদ্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে বিবৃতি আদায় এবং আন্দোলনকারীদের গুম, খুন এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মস‚চি ঘোষণা করা হয়েছে।