কেমন করে এমন হলাম

9

আহসানুল হক

শুরুতেই আমি বিভাগীয় সম্পাদকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাকে এই বিভাগে লেখার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। শৈশব থেকেই সাহিত্যের প্রতি একধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, আল-মাহমুদ, জসীম উদ্দীন, সুকুমার বড়ুয়া, সুকুমার রায়ের কবিতা -ছড়া মনকে আলোড়িত করে। তখন আমি চট্টগ্রাম কলেজে পড়ি। ডাকযোগে একটা ছড়া পাঠিয়ে দেই দৈনিক আজাদীর শিশুতোষ পাতা ‘আগামীদের আসর’ বিভাগে। কিছুদিন পরে সেখানে ছাপা হয় ছড়াটি। সে কী আনন্দ অনুভূতি! বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে কবি নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, হেলাল হাফিজ, জয় গোস্বামী, শঙ্খ ঘোষের কবিতায় মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ি। নিজেও লিখতে শুরু করি। সাহস করে একটা লেখা আজাদীর সাহিত্য সম্পাদক বরাবর পাঠিয়ে দিই। কয়েক সপ্তাহ পর আমাকে বিস্মিত করে কবিতাটি ছাপা হয় ‘সাহিত্য সাপ্তাহিকী’’ পাতায় অনেক প্রতিষ্ঠিত কবিদের সাথে। মনে হলো সেদিন আমার ঈদুল ফিতর। এভাবেই পত্রিকায় আমার আত্মপ্রকাশ। বাবা-মা, ভাইবোন ও বন্ধু-বান্ধবের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা তো ছিলই। আমার মা বেগম রোকেয়া হক নিজেও কবিতার একজন নিবিষ্ট পাঠক ছিলেন এবং কাব্যচর্চা করতেন। ঘরে উদার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের পাশাপাশি আজাদীর শ্রদ্ধেয় সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, কবি-প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সম্পাদক অরুণ দাশগুপ্ত, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক সিদ্দিক আহমেদ (যাঁরা এখন সকলেই প্রয়াত) নিয়ত প্রেরণা যুগিয়েছন। অরুণ দা আমাকে ‘অনুকবি’ বলে স্নেহসুরে ডাকতেন। তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম দাদা আমি দীর্ঘ কবিতা লিখতে চাই, দাদা বললেন, দরকার নেই -তোমার কবিতায় অল্পের মধ্যে বৃহৎ অর্থের প্রকাশ ঘটে। আজাদীতে প্রায় সকল বিশেষ সংখ্যায় আমার ‘যুগল কবিতা’ ছাপানো হতো। ওদিকে দৈনিক পূর্বকোণের ‘কলরোল’ ও সাহিত্য পাতায় তখন আমার ছড়া -কবিতা ছাপানো হচ্ছে। শুধু তাই নয় পূর্বকোণ থেকে তখন লেখক সম্মানীও দেওয়া হতো যা এখনো ঢাকার অনেক পত্রিকা সাহস করেনা। একজন তরুণ লিখিয়ের জন্য এ যেন বিশাল প্রাপ্তি। এসময় পূর্বকোণ, আজাদী ও জনকণ্ঠ পত্রিকায় আমি Sub-editorialI Post-editorialও লিখতে থাকি। এজন্য আমি কবি ও নাট্যকার শিশির দত্ত, চলচ্চিত্রকার-গবেষক আনোয়ার হোসেন পিন্টু দা’র কাছে (যাঁর সাথে আজ অবধি আমার দেখা -সাক্ষাৎ হয়নি অথচ নিয়মিত আমার ছড়া ছেপেছেন) ঋণী। তরুণ বয়সে নিজের নাম ও ঠিকানা গোপন রেখে বিভিন্ন দৈনিকের রমণীয় পাতায় শ্রাবণী চৌধুরী ছদ্মনামেও কবিতা লিখতাম। একবার তো এক সম্পাদকের কাছে ধরাই পড়েছিলাম। তিনি এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাইলে -‘আমি বললাম সলিল চৌধুরী যদি সুরাইয়া চৌধুরী এবং অচিন্ত্য কুমার সেন গুপ্ত যদি ‘নীহারিকা দেবী’ নামে লিখতে পারেন তবে আমি কেন….? আমার ছড়াকার হিসাবে যৎসামান্য পরিচিতিতে বিশাল অবদান রেখেছেন বিশিষ্ট কবি ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ ভাই, প্রদীপ দেওয়ানজী, বিপুল বড়ুয়া। রাশেদ ভাই একদিন এই উদীয়মান তরুণ লিখিয়েকে আমন্ত্রণ জানান শিশুসাহিত্য আসর ‘স্বকাল’-এ আসার জন্য। সেসময় স্বকাল এ (লালদিঘী পাড়ের ঘাসের বিছানায়) পাক্ষিক সাহিত্য আসর বসতো এবং লেখকদের লেখা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হতো। উল্লেখ্য, তখনও আমি মূলত: কবিতাই লিখতাম তাঁর উৎসাহেই আমি ছড়াসাহিত্যে আকৃষ্ট হই। ছাত্রজীবনেই প্রখ্যাত ছড়াশিল্পী লুৎফর রহমান রিটন সম্পাদিত ‘ছোটদের কাগজ’, মাসিক ‘শিশু’ ‘টইটম্বুর’ কিশোর বাংলা, নবারুণ, সচিত্র বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক রোববার ও বিচিত্রায় লেখা প্রকাশ হতে থাকে। আমার লেখালেখির জন্য টইটম্বুর সম্পাদক শ্রদ্ধেয় সেলিমা সবিহ্ (যাঁর সাথে কখনো দেখা হয়নি) বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফারুক নওয়াজ এবং রহীম শাহ্ এঁদের কাছেও বিশেষভাবে ঋণী। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা পদে কক্সবাজারে চাকুরিতে যোগদান করে যখন ছড়াসাহিত্য চর্চার খরাতে ভুগছিলাম তখন প্রেরণার আধার হয়ে আবির্ভূত হন ড. এম. এ. মোমেন (ছদ্মনাম : আন্দালিব রাশদী), কবি হারুন-উজ-জামান, ছড়াশিল্পী অপু বড়ুয়া ও রমজান মাহমুদ। প্রকৃত অর্থে আমি এখনো লেখক হয়ে উঠিনি। এখনো শিখছি এবং লেখার চেষ্টা করছি মাত্র। তবে তিনটি বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।