কী কী মানা করল ছাত্ররা

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক যে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা এসেছে, তার রূপরেখা কী হবে সে বিষয়ে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচিতে জরুরি সেবা ছাড়া সব ক্ষেত্রে সরকারকে অসহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই সংঘাত সরকারি হিসাবে দেড়শ মানুষের মৃত্যুর পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শুক্রবারই কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলন রোববার থেকে অসহযোগের ডাক দেয়। তবে এই কর্মসূচির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
সংঘর্ষের সময় ছাত্র জনতা হত্যার বিচার ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে এই সিদ্ধান্তের পরই স্পষ্ট হয় সংগঠনটি সরকার পতনের দাবি জানাতে যাচ্ছে।
শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে সেই দাবিই তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এখন আর ৯ দফা নেই, তাদের দাবি এক দফা। এই সমাবেশেই অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
আসিফ মাহমুদ বলেন : ১. কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না। ২. বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোন ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না। ৩. সকল ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন। ৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ৪. প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন না। ৫. সকল ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন। ৬. বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না। ৭. দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাই বোনেরা কাজে যাবেন না! ৮. গণপরিবহন বন্ধ থাকবে,শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। ৯. জরুরি ব্যাক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। ১০. পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যাতিত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু মাত্র থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে। ১১. দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সকল অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে। ১২. বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যাতীত অন্যান্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে। ১৩. আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। ১৪. বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো রুম, বিপণি-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণ, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ।
সমাবেশে আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নামার আহŸান জানাচ্ছি। এই ‘খুনি সরকারকে’ কোনোভাবে আর সমর্থন দেবেন না। ‘যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কোনোভাবে কারফিউ জরুরি অবস্থা দেওয়া হয়, আমরা বলে দিচ্ছি প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী, সেনাবাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা সবার কাছে আহবান থাকবে, জনগণ যদি সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে, সরকারি যদি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, সেই সরকারের হুকুম আপনারা মানবেন না।
আমরা এই বাংলার মাটিতে সকল ‘গণহত্যার’ বিচার করব। আমরা সরকার এবং ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ ঘোষণা করছি। এর জন্য ছাত্র নাগরিকের অভ্যুত্থান আহবান করছি।