কালীপুরের বাগানে ঝুলছে টসটসে লিচু

12

রাহুল দাশ নয়ন

সবুজ গাছের ফাঁকে যেন সূর্য ঝিলিক মারছে। দূর থেকে এমন দেখালেও কাছে গেলে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে কালীপুরের সবুজ বাগানে ঝুলছে থোকায় থোকায় লাল রঙের লিচু। লিচুর রঙ আসায় বাগানে বেড়েছে পাখির কলতান। পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত বাগান। পাখি তাড়াতে টুংটাং টিনের আওয়াজ আর বাগান মালিকের হাঁকডাকতো আছেই। বাঁশখালীর কালীপুরে যেন শুরু হয়েছে লিচু উৎসব। উঁচুনিচু পাহাড়ের সারিতে লাগানো ঝুপড়ি গাছের শাখা-প্রশাখায় লিচু আর লিচু। আপাতত অতি পাকনা লিচু বাজারে আসলেও আগামী সপ্তাহে পুরোদমে বাজারে আসবে কালীপুরের টসটসে লিচু।
বাঁশখালীর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু সালেক পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাঁশখালীতে লিচুর রঙ লেগেছে। অতিরিক্ত গরমে কিছু বাগানের লিচু ফেটে গেছে। আগামী সপ্তাহে লিচু পুরোপুরি বাজারে আসবে। নিয়মিত বৃষ্টি না হলে লিচুর সাইজ ছোট হয়। পাশাপাশি রস যখন বেশি হয় তখন আবার বৃষ্টি হলে লিচু ফেটে যাবে। প্রকৃতি পক্ষে না থাকলে আশানুরূপ লিচুর ফলন হয় না। চলতি বছরে ৬৩০ হেক্টর লিচু চাষ হয়েছে। বাঁশখালীতে স্থানীয় জাত ছাড়াও উন্নত জাতের চার ধরনের লিচু বেশি মিলে। কালীপুর ছাড়াও আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর লিচু চাষ হয়েছে।’
কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাঁশখালীতে প্রতিবছরই লিচু চাষ বাড়ছে। উপজেলার পুঁইছড়ি, চাম্বল, জলদী, কালীপুর, বৈলছড়ি, সাধনপুরের পাহাড়ি এলাকায় লিচু চাষ বেশি হয়। সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয় কালীপুরে। কালীপুরের লিচুর কদর দেশজুড়ে। ২০২০ সালে ৬০০ হেক্টর, ২০২১ সালে ৭০০ হেক্টর, ২০২২ সালে ৭২০ হেক্টর, ২০২৩ সালে ৭৬০ হেক্টর লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৫৯০ হেক্টর, চলতি সালে ৬৩০ হেক্টর লিচু চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে বীজের গাছ হয় ২০১-২২০টি। কলমের নতুন জাতের চারা হয় ২৬০টি। বাঁশখালীতে স্থানীয় উন্নত জাতের কালীপুরী লিচু, বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না-টু, মোজাফ্ফরী (স্থানীয়ভাবে কলকাতা লিচু) লিচুর আবাদ হয়। ব্যবসায়িকভাবে চায়না-থ্রি ও চায়না-টু জাতের লিচু বেশি বিক্রি হয়। বাঁশখালীতে স্থানীয় জাতের লিচু যেটিকে কালীপুরী লিচু বলা হয় সেটির কদরই বেশি। চায়না থ্রি জাতের লিচুর শাঁস বড় কিন্তু বিচি ছোট। ফলনও আসে দেরিতে। কালীপুরী লিচুর শাঁস ও বিচি ছোট হলেও আগেভাগেই ফলন আসে। যে কারণে ব্যবসায়িকভাবে এ জাতের লিচু বিক্রি করে বাগান মালিকরা বেশি লাভবান হয়।
বাগান মালিক ও পাইকাররা জানান, রাস্তার কাছে বাগানের চেয়ে পাহাড়ি এলাকার বাগানগুলোতে ফলন বেশি হয়। গাছ থেকে লিচু ছেঁড়ার আগে পর্যন্ত বাগানের পরিচর্যা করতে হয়। প্রকৃতি অনুকূলে না থাকলে লিচুর ফলন কমে যায়। কালীপুরের লিচু সারাদেশেই যায়। আগেভাগে বাজারে আসার কারণে এই লিচুতে বেশি লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে অনেক বাগান পাইকাররা কিনে নিয়েছে। অনেকেই মৌসুমী ব্যবসা হিসেবে লিচু বিক্রি করে। স্থানীয় পাইকাররা কালীপুর রেজিস্ট্রি অফিস এলাকাতেই বেশি লিচু বিক্রি করে।
কালীপুরের ইউপি সদস্য ও লিচু বাগানের মালিক জামাল উদ্দিন ঝিনুক পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার চারটি বাগানের মধ্যে এবার তিনটি বাগান লাগিয়ত হয়েছে। লিচু বাগান দেখভাল করার মানুষ কম থাকায় এবার লাগিয়ত কম হয়েছে। অন্য বছর আগেভাগে লিচু বাগান কিনে নিলেও এবার আগ্রহ কম। আগামী সপ্তাহে বাজারে আসবে কালীপুরের লিচু। বর্তমানে কিছু লিচু বাজারে আসলেও সেগুলো প্রতিশত লিচু ২৫০-৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আমার সবগুলো বাগানে স্থানীয় জাতের লিচু চাষ হয়েছে।’