কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড মিরসরাই

10

মিরসরাই প্রতিনিধি

মিরসরাইয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসল, ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৩১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ঝড় ও বজ্রপাতে ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৮ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া ঝড় প্রায় দেড় ঘণ্টা এ তান্ডব চালায়।
জানা গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ে বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভা, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, মিঠানালা, ওয়াহেদপুর, দুর্গাপুর, খৈয়াছড়া, কাটাছড়া ও ইছাখালী ইউনিয়নে বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে। অনেক জায়গায় গাছ পড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি। উড়ে গেছে বসতঘরের টিনের চাল। বড় বড় গাছ পড়ে বন্ধ আঞ্চলিক সড়কে যানচলাচল। ক্ষেতের ফসল, বোরো ধান, আম ও কাঁঠালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ পড়ে উপজেলা ভূমি অফিসের একটি ভবন ভেঙে গেছে। বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় ঝড়ে টিন উড়ে এসে পড়ে আলমগীর নামের এক অটোরিকশাচালক গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঝড়ের সময় বিদ্যালয়ে অধ্যয়ররত অবস্থায় বজ্রপাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে আবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫ জন, জোরারগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন ও দুর্গাপুর নগেন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন ছাত্রী। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। উপজেলার মিঠাছড়া এলাকায় লাইনে বজ্রপাত হয়ে তিন ইঞ্চি পাইপ ফেটে যাওয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে ৭ ঘণ্টা পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
কাটাছড়া ইউনিয়নের কৃষক মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘ঝড়ে আমার ক্ষেতের এক হাজার ২৫০ পিস সাম্মাম গাছ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অনেক গাছে ফলনও এসেছিল। আমার লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো।’
মিরসরাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, ঝড়ের সময় বিদ্যালয়ে অধ্যয়ররত অবস্থায় বজ্রপাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে আবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫ জন, জোরারগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন ও দুর্গাপুর নগেন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন ছাত্রী।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক তন্ময় জামশেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে গেছে।
মিঠানালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম বলেন, ঝড়ে আমার এলাকার অনেক জায়গায় গাছপালা ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। সড়কে গাছ পড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহমেদ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের অফিসের আওতাধীন প্রায় ৩১টি খুঁটি ভেঙে গেছে। অসংখ্য জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। উপজেলার আরও বিভিন্ন এলাকায় আরও অর্ধশত বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যেতে পারে। আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, মিরসরাইয়ে এবার প্রায় ১৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। কালবৈশাখীতে অনেক জায়গায় বোরো ধান জমিনে শুয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় পানি জমে গেছে। তবে বৃষ্টি আর না হলে তেমন ক্ষতি হবে না।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।