কারবালায় পানির জন্য শিশুদের কান্নায়ও মন গলেনি ইয়াজিদের

6

জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আহলে বায়তে রাসূল (দ.) স্মরণে ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল রবিবার ছিল ৭ম দিন। এতে আহলে বায়তপ্রেমী সুন্নি ছাত্র-উলামা-জনতার ঢল নামে।
মাহফিলে দেশি-বিদেশি আলোচক ও ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, ৬১ হিজরিতে কারবালা ময়দানে আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) তাঁবুতে ফোরাত নদীর পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে পাষন্ড ইয়াজিদ জঘন্য নির্মমতা দেখিয়েছিল। নিষ্পাপ অবুঝ শিশু আলী আসগর ও আলী আকবরসহ অসংখ্য নারী-শিশু এক ফোঁটা পানির জন্য কান্না আর আহাজারি করেছিল। প্রচন্ড ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর নারী-শিশুদের সকরুণ আর্তনাদ সত্বেও পাষন্ড ইয়াজিদের মন গলেনি।
বক্তারা বলেন, ফোরাত নদীর পানি কুকুর-বিড়ালের জন্য উন্মুক্ত ছিল, কিন্তু আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) সদস্যগণকে সেদিন পানির কষ্টে ফেলে ইয়াজিদ যে নৃশংসতা দেখিয়েছে। ইতিহাসে এ নির্মমতার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। আল্লাহর অপার নিয়ামত নদী-সমুদ্রের পানির ওপর সকল দেশ ও মানুষের সমান অধিকার রয়েছে এবং পানির হক থেকে কাউকে কখনো বঞ্চিত করা যাবে না এটাই শাহাদতে কারবালার দর্শন ও অন্তর্নিহিত শিক্ষা।
মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।
সুফি মিজান বলেন, কারবালা কোন ঘটনার নাম নয়, একটি চেতনার নাম। আহলে বায়তে রাসূল (দ.) সেদিন যে ত্যাগের দৃষ্টান্ত রেখেছেন, দুনিয়ার ইতিহাসে তার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, অভিভাবকরা সন্তানদের প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসুন। সন্তানদেরকে আপনারা সোহাগে-শাসনে যোগ্য আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তুলুন। তবেই এ সন্তানরা বড় হয়ে আপনাদের চক্ষু শীতল করবে।
জমিয়তুল ফালাহর শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের সূচনাকারী খাতিবে বাঙাল অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরী (র.) এর ত্যাগ ও অবদানের কথা তিনি স্মরণ করেন। আগামী দিনেও এ মাহফিল অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা কামনা করেন তিনি।
আলোচক আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ আশরাফী বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) মসনদ পাওয়ার জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হননি। তিনি চেয়েছিলেন ইয়াজিদি দুঃশাসন থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে। এতে তিনি সফলও হয়েছেন।
তিনি বলেন, ইসলামের শান্তি ও মানবতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। হাসিমুখে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তবুও ইয়াজিদের সঙ্গে আপস করেননি।
ইসলামী শরিয়তে মাযহাব মানার কারণ ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কাদেরিয়া তৈয়বিয়া আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আল্লামা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক। তিনি বলেন, আমাদের পরিচয় আমরা মাযহাবি ও হানাফি। আর ওরা লামাযহাবী। যুল খোয়াইছারা তামিমি খারেজিদের নেতা। এ ব্যক্তি প্রিয় নবীর (দ.) সঙ্গে বেয়াদবি করে অভিশপ্ত হয়েছে। সিফ্ফিনের যুদ্ধে এই ব্যক্তি হযরত আলীর (রা.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। বেয়াদবী তাদের রক্ত মাংসের সঙ্গে মিশে আছে। ইসলামের নামে বিকৃত মতাদর্শী লামাযহাবি সালাফিরা আজ ইসলামের নামে নিত্য নতুন মতবাদ দিয়ে জঘন্য ফিতনার জন্ম দিচ্ছে। শিয়া ফেতনা ও লামাযহাবি ফেতনার কবল থেকে আমাদেরকে ঈমান আকিদা বাঁচাতে হবে।
আহলে বায়তের প্রতি ইমামগণের ভালোবাসা নিয়ে আলোচনা করেন হালিশহর মাদ্রাসায়ে তৈয়বিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল’র অধ্যক্ষ কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজিভি। তিনি বলেন, আহলে বায়াতে রাসূল (দ.) এর প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসাই ঈমান এবং ফরজ। যুগে যুগে সকল মাযাহাবের ইমাম আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের কথা বলে গেছেন। হানাফি মাযহাবই সকল মাযহাবের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আলহাজ মুহাম্মদ জহিরুল আলম, আলহাজ পেয়ার মুহাম্মদ, শাহজাদা সৈয়দ শাহদাত উদ্দিন, শাহেদ করিম, আলমগীর পারভেজ, মুহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা, ইদ্রিচ চেয়ারম্যান।
কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। নাতে রাসুল (দ.) পেশ করেন শায়ের মোহাম্মদ মহিউদ্দীন তানভীর।
ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ ছালামত উল্লাহর সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক ও মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মোহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, আনোয়ারুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, দিলশাদ আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, আবদুল হাই মাসুম প্রমুখ।
সালাত সালাম শেষে দেশ ও জাতির শান্তি-কল্যাণ এবং ফিলিস্তিনিসহ বিশে^র নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি