কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তের কাজ দ্রুত শুরু হোক

4

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

চট্টগ্রামের কাপ্তাই সড়কে বাসচাপায় চুয়েট এর দুই মেধাবি শিক্ষার্থী নিহতের অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ কবে শুরু হবে বলা যাচ্ছেনা। শুধু তাই নয়, চুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের পরেও আরো কয়েকটি দুর্ঘটনায় কাপ্তাই সড়কে মানুষের রক্ত ঝরেছে। এই কয়েকদিন আগেও এই সড়কেই দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হাফেজ মাওলানা আবদুল মান্নান নামে রাগুনিয়ার এক মাদ্রাসা শিক্ষক মারা যান। চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি সড়ক প্রশস্তকরণের দাবিটি ছিল অন্যতম। প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বাস মালিক সমিতি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই দাবি মানার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নের দৃশ্যমান ও দ্রæত অগ্রগতি দেখতে চায় সংশ্লিষ্ট সবাই। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে, চুয়েট গেইটের সামনে দেওয়া হয়েছে সড়ক ডিভাইডার। তবে চুয়েট শিক্ষার্থী ও সাধারন যাত্রীরা দ্রæত সড়ক প্রশস্তের কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন সড়ক প্রশস্তের দাবিটি বহুদিনের। এ নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা মানুষের অসন্তোষকে বাড়িয়ে তুলবে। এর আগেও এই সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে নানা দাবি আশ্বাসেই থেকে যায়। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সাধারন মানুষও কেবল আর আশ্বাস দেখতে চান না, তারা চান কার্যকরী পদক্ষেপ। বিশেষ করে রাস্তা প্রশস্তকরণের দাবিটির বাস্তবায়ন চান তারা।আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব ড. হাছান মাহমুদ এমপি এবং রাউজানের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী উদ্যোগ নিলে কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তের কাজ দ্রুত শুরু করা কোন ব্যাপার নয় বলে মনে করেন এ অঞ্চলের সাধারন মানুষ।
সড়কে মানুষ মরে, কিছুদিন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়। ফেসবুকে লেখালেখি হয়। এরপর সবকিছু স্তিমিত হয়ে আসে। আবার আরেকটি দুর্ঘটনা, আরেকজন মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন সড়কেই ঝরে পড়ে! এভাবে আর কত। বেপরোয়া গাড়ি কেড়ে নেয় আমার, আপনার স্বজনের প্রাণ। এর একটা বিহিত করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কাপ্তাই সড়ক নিয়ে মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। দুর্ঘটনার পাশাপাশি গোডাউন, রোয়াজার হাট, চৌমুহনীসহ বিভিন্ন স্টেশনে ব্যাপক যানজটের কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব আছে বৈকি!
সড়ক প্রশস্তকরণের পাশাপাশি যাত্রীদের সুবিধার্থে বিআরটিসির বাস, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে লোকাল বাস চলাচল করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে গতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিএনজিসহ সবধরনের যানবাহনে সহনীয় ভাড়া নির্ধারন করে দিতে হবে। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের কোন সুযোগ দেয়া যাবেনা।
গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। চাঁদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা ইতিপূর্বে এই চাঁদের গাড়ির ধাক্কায়, চাপায় মানুষ আহত ও নিহত হয়। বাইকের গতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। এমনিতে কাপ্তাই সড়কটি সাধারন যাত্রী ছাড়াও পর্যটকদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দিয়েই সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর গাড়ি চলাচল করে নিয়মিত। প্রায় সময় তাদের গাড়িগুলোও নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়। এসবের পাশাপাশি অন্য যে বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো মানুষের সচেতনতা। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে আমাদের নিজেদেরকেও রাস্তা পারাপার, চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অভিজ্ঞ চালক দ্বারা যান চলাচল, গাড়ির লাইসেন্সসহ যাবতীয় বিষয়গুলোর কার্যকর মনিটরিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটানোর সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সব বড় গাড়ি চালককে নিজের এবং অন্য ছোট গাড়ির চলাচলের প্রতি খেয়াল রেখে তবেই গাড়ি চালানো উচিত।
সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু করতে হবে। মানুষ আশ্বাস নয় কাজ দেখতে চান। তারা চান সড়কে শৃংখলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষ কাজ করুন। মানুষের আস্থা ফেরাতে পদক্ষেপ নিন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। এই চলাচলকে নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে মানুষের সড়ক প্রশস্তকরণের দাবিসহ যৌক্তিক সব দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে, কোন ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ যেন না রাখা হয়। সড়ক হোক সকলের জন্য নিরাপদ।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট