কাতারে হানিয়ার দাফন অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

কাতারে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ার দাফন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে হাজারো মানুষ। রাজধানীর দোহার ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল আল-ওয়াহাব মসজিদে গতকাল শুক্রবার তার জানাজা হয়। দোহার উত্তরে লুসাইল শহরের একটি কবরস্থানে তাকে সমাহিত করার কথা। আলআরাবিয়া নিউজ জানিয়েছে, হানিয়ার জানাজায় যোগ দেন হামাস নেতা খালেদ মেশাল। হানিয়ার জায়গায় তাকেই উত্তরসুরি হিসেবে বেছে নিতে পারে সংগঠনটি। খবর বিডিনিউজের
হানিয়ার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি হামাসের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতা এবং কাতারের আমির শেইখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিও জানাজায় অংশ নেন। ফিলিস্তিনের পতাকায় মোড়ানো হয় হানিয়া ও তার দেহরক্ষীর কফিন।
গত বুধবার ইরানের তেহরানে একই হামলায় তারা নিহত হন।
হামসের জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি বলেন, ‘দখলদারদের (ইসরায়েল) প্রতি আমাদের বার্তা হল, তোমরা কাদার গভীরে ডুবে যাচ্ছ। তোমাদের ধ্বংস আরও কাছে চলে আসছে। হানিয়ার রক্ত সব সমীকরণ পাল্টে দেবে’।
ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার তেহরানে গিয়েছিলেন হানিয়া। পরদিন নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিনি ও তার দেহরক্ষী নিহত হন। হানিয়ার মৃত্যুতে হামাস বলেছে, ‘তেহরানে হানিয়ার বাসস্থানে জায়নবাদীদের বিশ্বাসঘাতক অভিযানে তিনি নিহত হন’।
ইরানের বিপ্লবী রক্ষাবাহিনীর মুখপত্র বলেছেন, হানিয়া উত্তর তেহরানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক এলাকায় ছিলেন আর সেখানে ‘আকাশ থেকে আসা একটি অস্ত্রের আঘাতে’ নিহত হন তিনি।
ইসরায়েল এখন পর্যন্ত হানিয়ার হত্যাকান্ড নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। দেশটির সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করে না; তবে বলেছে, তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দেখছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় জন্মগ্রহণকারী হানিয়া সেখানে বেড়ে উঠলেও বেশ কয়েক বছর ধরে নির্বাসনে কাতারের দোহায় বসবাস করছিলেন। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের চলমান পরোক্ষ আলোচনা তত্ত্বাবধান করছিলেন।তার মৃত্যুতে এই প্রচেষ্টায় কী প্রভাব পড়বে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
বিবৃতি-বক্তৃতায় অত্যন্ত কঠোর হলেও বিশ্লেষকরা হানিয়াকে হামাসের গাজাভিত্তিক নেতা মোহাম্মদ দেইফ ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারের তুলনায় একজন ‘মধ্যপন্থী’ ও ‘বাস্তবধর্মী’ নেতা হিসেবে দেখতেন।
হানিয়াকে হত্যা করার কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিচ্ছেন হানিয়া। ইসরায়েলের আগ্রাসনে সেই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হলেও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের কাছ থেকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ফিলিস্তিন, যার নেপথ্যে ছিলেন হানিয়া।
২০১৭ সাল থেকে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন হানিয়া। সেই থেকে ইসরায়েলের হত্যাচেষ্টা এড়িয়ে কাতার, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করতে দেখা যায় তাকে। ১০ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে দোহায় অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছিলেন তিনি।