কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

9

বর্ষার বৃষ্টি মানে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় এডিশ মশার আক্রমণ ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও ছাত্র, শিক্ষকদের আন্দোলন এবং দুর্নীতির নানা উপাখ্যানের ডামাডোলের মধ্যে অনেকটা আড়ালে পড়ে গেছে। অথচ সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল গত সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৮ জন। এ সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হন।
এতে ধারণা করা যাচ্ছে, গত বছরের মতো এবারও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এডিস মশাবাহিত এ রোগ। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে ২০২৩ সালে দেশে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল ডেঙ্গু। উল্লেখ্য, আগের ২৩ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেছেন ৮৬৮ জন। কিন্তু শুধু গত বছরই মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন। দেশের ৬৪ জেলায়ই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল গত বছর। বস্তুত ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আমাদের জন্য একটি বিশেষ সতর্কবার্তা রেখে গেছে; আর তা হলো, আমরা যদি সতর্ক না হই, তাহলে এ বছরও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। উল্লেখ্য, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, মৃতের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। কাজেই এখনই সবার সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠার কারণ মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এবং স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মশার ওষুধ ছিটানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেভাবে তা চোখে পড়ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একদিনে বা এক বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। অব্যাহত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সুফল মিলতে পারে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এডিসের উৎপাত বেড়েছে। এ প্রজাতির মশা প্রতিক‚ল জলবায়ুর সঙ্গে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করছে। তাই ধারণা করা যায়, এডিসের উৎপাত বছরজুড়েই থাকবে। কাজেই ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে নাগরিকদেরও খেয়াল রাখতে হবে-তাদের বাসার আশপাশের খোলা স্থানে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে। নাগরিক সচেতন না হলে কোনভাবেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা। এছাড়া চট্টগ্রামে বর্ষার বৃষ্টিতে সড়কগুলো খানাখন্দকে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে অনেক সড়ক, এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলায় অনেক খাল ও নালায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। এতে এডিশের প্রজনন বাড়ছে। এ বিষয়গুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দিতে হবে। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে নগরবাসী কিছুটা মুক্তি পাবে।