কমেছে মাছ-মাংস ও সবজির দাম

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সাথে সাথে কমতে শুরু করেছে সবজি, মাছ ও মুরগির দাম। সবজির ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে এবং মাছ-মুরগির ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, আগে বাজারের মধ্যে কিছু নেতাদের চাঁদা, পরিবহনে পুলিশকে চাঁদাসহ অদৃশ্য অনেক জায়গায় টাকা দিতে হতো। কিন্তু সরকার পতনের পর ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে পারায় এখন আর কোথাও টাকা দিতে হচ্ছে না। আবার শিক্ষার্থীদের একটা অংশ প্রশাসনের মত বাজার মনিটরিং করেছেন। তারা বাজারে গিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেন। গতকাল নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার ও বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার ঘুরে এসব পরিস্থিতি জানা গেছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সেলিম পূর্বদেশকে বলেন, ‘রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন বাজারে দৃশ্য-অদৃশ্য অনেক চাঁদা দিতে হত। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছু সিন্ডিকেট ছিল। তাদের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্থানীয় থানা, ট্রাফিক পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতা, ছাত্রলীগ নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইজারাদারসহ নানা জায়গায় আমাদের টাকা দিতে হত। তাই ৩০ টাকার সবজি আমাদের বাধ্য হয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। কারণ টাকা তো ঘর থেকে এনে দিবে না কোনো ব্যবসায়ী। ব্যবসা করে টাকাটা দিতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা দাম দিয়ে বিক্রি করতাম। এখন কাউকে টাকা দিতে হচ্ছে না, তাই আমরাও বেশি দাম নিচ্ছি না।’
চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, ‘আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করার জন্য আজ বাজারে গিয়েছিলাম। সেখানে ওজন স্কেল, অতিরিক্ত দামসহ নানা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা তাদের একদিনের সময় বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে অসঙ্গতি থাকলে তা সংশোধন হওয়ার সুযোগ প্রদান করি। না হয় আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে আমরা তাদের বাজারে ব্যবসা করতে দিবো না।’
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোন কোন সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশে চলমান পরিস্থিতিতে বাজারে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার কারণে সবজির দাম কমেছে বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পাড়া ও আবাসিকে ভ্যানগুলোতেও তুলনামূলক আরও কম দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শসা ৩০ টাকায়। এসব সবজির মধ্যে কিছু কিছু সবজির গত সপ্তাহের মূল্য ছিল কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। এদিকে সবজির মূল্য কমায় ক্রেতারাও অনেক খুশি। তাদের মতে, সবজির দাম আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও কমবে।
অন্যদিকে বাজারের চেয়ে বিভিন্ন আবাসিক ও পাড়ায় ভ্যানে করে বিক্রিত সবজির দাম তুলনামূলক আরও কম দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
নগরীর বাকলিয়া সৈয়দ শাহ রোড এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ খায়রুল বশর বলেন, সকালে আলু ৫০ টাকা ও ৪০ টাকা কেজিতে কাঁকরোল কিনেছি। তাছাড়া অন্যান্য সবজিও তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারছি।
দাম কমে যাওয়ার ব্যাপারে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, আগে পাড়ার চাঁদাবাজদের টাকা দিতে হতো। এখন তারা এলাকাছাড়া। তাই চাঁদা দিতে হচ্ছে না বলে কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারছি। দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য কমে যাওয়ায় সবজির দাম কমে যাওয়ার কারণ বলে জানালেন বিক্রেতারা। এছাড়া বাজারে মুরগির সরবরাহ সংকটের কারণে গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি কেজি ২০০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন সরবরাহ বাড়ায় ব্রয়লারের কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বাজারে এখন মুরগির ঘাটতি নেই, পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।’
মাছের বাজারে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সে অনুযায়ী প্রতিকেজি পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, ছোট রুই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছ ৩০০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, সাগরের পোয়া ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা এবং ইলিশ আকারভেদে ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে।
ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ডিমের সররবাহ বাড়লেও এখনও চড়া রয়েছে দাম। খুচরায় প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে দাম ছিল ১৫০ টাকা। তবে কয়েকদিনের মধ্যে তাও কমে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম টিটু পূর্বদেশকে বলেন, ডিমের বাজার এখনও ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের সিন্ডিকেটের হাতে রয়েছে বিধায় দামের কোনো হেরফের হয়নি। তবে দু-একদিনের মধ্যে তাও স্বাভাবিক ও সাধারণের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।
এদিকে বাজার মনিটরিং এর দায়িত্ব নিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলেন। কোনো সিন্ডিকেট থাকলে তাদের নাম প্রকাশ করার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেন।