কঠিন বিপদেও নামাজ আঁকড়ে ধরা কারবালার দর্শন

2

হাজারো আহলে বায়েতপ্রেমী দ্বীনদার জনতার অংশগ্রহণে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আন্তর্জাতিক শাহদাতে কারবালা মাহফিল মুখরিত হয়ে উঠেছে। ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল সোমবার ছিল ৮ম দিন। এদিন বিদেশি আলোচক ছিলেন ভারত কাসওয়াসা দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন কায়েদি মিল্লাত শাহসূফি আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ আশরাফি আল জিলানী।
তিনি বলেন, প্রচন্ড ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) পূতপবিত্র সদস্যগণ কঠিন বিপদেও নামাজ ত্যাগ করেননি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দ্বীনের স্তম্ভ নামাজকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন তাঁরা। তাই কঠিন বিপদেও নামাজ পরিত্যাগ না করা এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা ও তাওয়াক্কুল রাখাই হযরত ইমাম হোসাইনের (রা.) শাহাদাতের দর্শন।
আল্লামা আশরাফি বলেন, প্রচন্ড চাপ সত্ত্বেও হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেননি। সেদিন সত্যকে আঁকড়ে ধরে কঠিন সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ইয়াজিদিদের সঙ্গে আদর্শের যুদ্ধে বিজয়ের মুকুট পরেছিলেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)।
গতকালের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মহসিন। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রপ্ত আলহাজ সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ ইউনুছ বলেন, কারবালার প্রান্তরে নবী পরিবারের ত্যাগ ও শাহাদাতের ঘটনা দুনিয়ার ইতিহাসে অতুলনীয়। তাই আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) দামান শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে আমাদেরকে নাজাতের সৌভাগ্য অর্জন করতে হবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে আলহাজ সুফি মিজান বলেন, মানুষকে প্রফুল্ল রাখা, স্ত্রীকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া, নিজের সন্তানদেরকে প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা, সৎভাবে হালাল জীবিকা অর্জন এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করাই একজন আদর্শ মানুষের বৈশিষ্ট্য। আজ আমরা ভোগ-উপভোগে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছি। একটি সাদামাটা জীবন খুব সহজেই পার করে দেয়া যায়। জীবনে বহু টাকার প্রয়োজন নেই। অল্পে তুষ্ট থাকলেই জীবন সুখে-শান্তিতে ভরে যায়। জমিয়তুল ফালাহর এই শাহাদাতে কারবালা মাহফিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্য-মর্যাদাকে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদি প্রেতাত্মারা নবী পরিবারের নিষ্পাপ অবুঝ নিরপরাধ সদস্যদের ওপর যে জঘন্য নির্মমতা চালিয়েছে, ইতিহাসে এর দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারবালা আমাদের ঈমানি চেতনাকে জাগিয়ে তুলে। কারবালার শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঈমানি শক্তি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
মিডিয়াতে সুন্নিয়ত চর্চার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর আল্লামা মুহাম্মদ কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী। তিনি বলেন, অতীতের চেয়ে এখন মিডিয়াতে সুন্নিয়তচর্চা বেশি স্থান পাচ্ছে। এটি ইতিবাচক দিক। এদেশের মিডিয়া তথা গণমাধ্যমে ধীরে ধীরে শাহাদাতে কারবালার ঘটনা গুরুত্ব পাচ্ছে। আগে আশুরা দিবসে বড় হেডিংয়ে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের সচিত্র নিউজ দেখা যেতো। তাজিয়া মিছিল যে শিয়াদের লোক দেখানো মাতম এবং তা যে বিকৃত সংস্কৃতি মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে তুলে ধরতে হবে।
ইসলামে সুফিবাদ নিয়ে আলোচনা করেন পীরে তরিকত শাহসুফি মাওলানা মীর মুহাম্মদ মাঈনুদ্দিন নুরী আল কোরাইশী। তিনি বলেন, সুফিবাদই ইসলামের নির্যাস। তাই তাসাউফ ও সুফিবাদকে আমাদেরকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে।
মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ সোলাইমান আনসারী, পীরে ত্বরিকত আল্লামা বেলায়ত হোসাইন আলকাদেরী, চট্টগ্রাম কালেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ পেয়ার মোহাম্মদ, দরবারে ইছাপুরীর শাজ্জাদানশীন শাহজাদা সৈয়দ আমানুল্লাহ আহসান, ইছাপুর দরবার শরীফের শাহাজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ আজিম, মাওলানা আবুল হাশেম শাহ, মাওলানা গোলাম মোস্তফা মুহাম্মদ নুরুন্নবী, আলহাজ¦ মুহাম্মদ সেলিম।
কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। নাতে রাসুল (দ.) পেশ করেন শায়ের মোহাম্মদ মহিউদ্দীন তানভীর। ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ ছালামত উল্লাহর সঞ্চালনায় মাহফিলে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যগণ, বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদনশীনগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক ও মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মোহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, আনোয়ারুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, দিলশাদ আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, আবদুল হাই মাসুম, সাহেদ করিম, রফিক আশরাফি, অধ্যাপক অহিদুল আলম প্রমুখ।
সালাত সালাম শেষে দেশ জাতির শান্তি কল্যাণ এবং ফিলিস্তিনিসহ বিশে^র নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি