ওয়াসার এমডি অবরুদ্ধ

25

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি একেএম ফজলুল্লাহর পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন হয়েছে। ‘বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে দুই শতাধিক লোক জড়ো হয়ে এ আন্দোলন করে। প্রায় এক ঘণ্টা ওয়াসা এমডিকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এমডির পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় ‘দফা এক, দাবি এক; এমডির পদত্যাগ’ স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
গতকাল রবিবার সকাল ১১টার দিকে ওয়াসা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরে সেখান থেকে এমডির কক্ষে অবস্থান নেন তারা। এ সময় এমডির পদত্যাগ নিশ্চিত এবং ওয়াসার সংস্কারে ১৭টি দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা।
এসব দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সেখানে বক্তব্য রাখেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, সেলিম জাহাঙ্গীরসহ বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ-এর নেতৃবৃন্দ।
ওয়াসা এমডির কক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা সরকারের খুব আপনজনদের একজন আপনি। সুতরাং আমরা চাই স্বৈরশাসকের অনুসারিরা এ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকবে না। তাই দ্রুত চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি থেকে পদত্যাগ করুন। স্বৈরশাসকের শাসনামলে নানা লুটপাট করেছেন। এটা জাতির কাছে স্পষ্ট এবং দৃশ্যমান। স্বৈরশাসকের কোন দোসরকে এ পদে রাখবো না। এখন আপনি কি করবেন বলেন?
জবাবে ওয়াসা এমডি প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আমি কোন স্বৈরশাসকের দোসর না। তাদের কারো সঙ্গে আমার যোগাযোগও ছিল না।
এ সময় নানা প্রশ্নে ওয়াসা এমডিকে জর্জরিত করেন আন্দোলনকারীরা। তবে কোন অবস্থাতেই পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দেন ওয়াসা এমডি। প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদের চেয়েও দ্বিগুন লোক দাঁড় করানোর কথাও জানান তিনি।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, চাকরি জীবনে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ফজলুল্লাহ। এছড়া একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুইবার করাভোগও করেছিলেন তিনি। এ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এরপর ২০১১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে এমডি পদ দখল করে আছেন। ওয়াসার প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা ও বিদেশে পাচার করেছেন এমডি।
আন্দোলন শেষে পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসা এমডি ফজলুল্লাহ বলেন, আমাকে সরকার এ পদে বসিয়েছে। সরকার যেদিন আমাকে বলবেন, আমি তখনই পদত্যাগ করবো। আমি যদি আজকে পদত্যাগ করি, কাল যদি আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, তার দায়ভার কে নিবে? এখন আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হলো, এমডি ফজলুল্লাহর আয়কর বিবরণী ২০০৯-২০২৪ এবং সম্পদ বিবরণী জনসম্মুখে প্রকাশ, ভ্রমণ বিল (২০০৯-২০২৪) এর পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ এবং ভ্রমণ বিলকে ব্যবসায় পরিণত করায় অবিলম্বে তা সরকারি কোষাগারে জমা করা, অবিলম্বে স্বৈরচারী সরকারের পোষ্যদের নিয়ে গঠিত বোর্ড বাতিল, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশল ও রাজস্ব শাখাকে ঢেলে সাজানো, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ৪ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নিয়ে তান্ডবে অংশ নেওয়া ওয়াসার কর্মচারীদের চিহ্নিত করে স্থায়ী বহিষ্কার করা, সরকার পতনের পর এমডির দেওয়া সকল অবৈধ অফিস আদেশ বাতিল, ফজলুল্লাহর সময়ে বহিষ্কৃত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা, যে সকল কর্মকর্তা প্রাধিকারের বাইরে গাড়ি ও জ্বালানি ভোগ করছেন তা সরকারি কোষাগারে জমা করা, যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অধিক ৫ বছর একই কর্মস্থলে কর্মরত তাদের দ্রæত বদলি করা, বিগত সরকারের আমলে সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্পের নথি-অডিট সংক্রান্ত তথ্য ও সমস্ত ক্রয়ের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা, চট্টগ্রাম ওয়াসা রেস্ট হাউজের বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাসের বিল (২০০৯-২০২৪) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিজ খাত থেকে পরিশোধ করতে হবে, ব্যারিস্টার কলেজ এলাকায় অবৈধ সংযোগের তদন্ত-ওয়াটার ওয়ার্কসে ভাউচারে পানি বিক্রয়ের টাকা আত্মসাতের তদন্ত প্রতিবেদন সহ ২০০৯ এর পর সংগঠিত অন্যান্য দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্প, রাজস্ব ও রাজস্ব শাখার দুর্নীতি প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে মনিটরিং সেল চালু করতে হবে। বিক্রয় বিভাগে ১৫ বছর ধরে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রিচার্ড নেলসন পিনারুর অনিয়ম তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, উইংস লিমিটেড নামের ঠিকাদার থেকে স্মার্ট মিটার কিনে ‘পদ্মা’ নামে বিল করার রহস্য ও অনিয়ম তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে, বিগত ১০ বছর ধরে ৩০-৩৫ শতাংশ পানি সিস্টেম লস দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাতের সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে, বিগত ১৫ বছরে করোনাসহ নানা সংকটের মধ্যে পানির দাম বাড়িয়ে মানুষের কষ্টের প্রতিকার করতে হবে।