এলাকাবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত এভারেস্ট জয়ী বাবর আলী

6

হাটহাজারী প্রতিনিধি

বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয়ী হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের হালদা পাড়ের লেয়াকত আলী ও লুৎফুল নাহার বেগমের সন্তান ডা. মো. বাবর আলী। যিনি চট্টগ্রামের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায়। তিনি এ প্রাচীন জনপদের প্রথম এভারেস্ট জয়ী। দেশে এসে তিনি তার গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন।
গত মঙ্গলবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে বিমান এয়ারলাইন্সের বিজি ৩৭২ ফ্লাইটে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছান বাবর আলী। বীরদর্পে বিমান বন্দরের ১২ নম্বর গেট দিয়ে বাবর বাইরে আসা মাত্র বাঁধভাঙা তারুণ্যের জোয়ারে দাঁড়িয়ে থাকলেন পর্বতের মতোই। এ সময় ফুলের তোড়া, হলুদ গাদার মালায় ঢেকে দিলেন বাবরকে। এখানেই শেষ নয়, রীতিমতো কাধে তুলে শূন্যে ছুড়ে উল্লাস করলেন। একবার নয়, দুইবার নয়, বার বার। সেই সঙ্গে ছিল ‘বাবর বাবর’ স্লোগান।
ওই সময় এভারেস্ট জয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাবর বলেন, আত্মবিশ্বাস ছিল এভারেস্ট ও লোৎসের চূড়ায় পৌঁছানোর পর আবার দেশে ফিরে আসব। সেটিই হলো। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ, প্রচেষ্টা, আকাক্সক্ষা সবই পূরণ হলো। দেশের মানুষ যেভাবে উৎসাহ জুগিয়েছে, এতে আমি আনন্দিত, উচ্ছ¡সিত ও অভিভূত।
এরপর বিমানবন্দর থেকে নিজ বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের নজুমিয়া হাট এলাকার বাদশা মিয়া সিপাহীর বাড়িতে পৌঁছান। এ সময় বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত বাবর আলীকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমান ছিলেন হাজারো মানুষ। রাত ১১টার দিকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে বাবর আলীর গর্ভধারিনী মা লুৎফুল নাহার বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলেন, আমি গর্বিত। মায়ের সন্তান হিসেবে আমি যেমন গর্ববোধ করছি, তেমনি এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেও গর্ববোধ করছি। গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে বাবর আলী বলেন, আমার আত্মবিশ্বাস ছিলো এভারেস্ট ও লোৎসে পর্বত জয় করে সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পারবো। শেষ পর্যন্ত আমি পেরেছি। আমার মায়ের দোয়া ছিলো সবসময়ই আমার সাথে। সমগ্র দেশবাসী আমাকে শুভকামনা জানিয়েছে, দোয়া করেছে। আমি আজ সফল হয়েছি।
মঙ্গলবার রাত ১১টায় বাবরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার ছোটবেলার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্য এবং গ্রামবাসীর ফুলেল শুভেচ্ছা ও অকুণ্ঠ ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় থাকা বাবরের মা-বাবা প্রায় ২ মাস পর ছেলেকে কাছে পেয়ে দারুণ আনন্দিত। ছেলের এমন প্রাপ্তিতে তাদের চোখ ছলছল করছিল। বাবররা তিন ভাই-বোন। তারা সবাই অত্যন্ত খুশি। ভাইকে বরণ করতে বাবার বাড়িতে এসেছেন ছোটবোন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম হামীমুন তানজিন। বাবর আলীর বড় ভাই ব্যারিস্টার মামুন আলী সপরিবারে থাকেন অস্ট্রেলিয়া। সবার ছোট বিকাশের এক্সিকিউটিভ অফিসার আবীর আলী ছুটি পাননি বলে তার কর্মস্থল সিলেটের হবিগঞ্জে আছেন।
পরিবার তথা বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চিকিৎসক হয়ে ছোটবেলা থেকে পাহাড়-পর্বত জয়ের নেশায় বিভোর ছিলেন আমার বাবর-এমনটা দাবি করে মা লুৎফুল নাহার বেগম বলেন, বাবর ছোটবেলা থেকেই চঞ্চল। তবে মেধাবী ছিলেন। তিনি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন। দেশবাসীর দোয়ায় সে এভারেস্ট জয় করে দেশে ফিরেছে। তাই, খুব ভালো লাগছে।
এদিকে বাবর আলীর বাড়ি ফেরা নিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও প্রামবাসীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। গতকাল বুধবারও সকাল থেকে অনেক বাসায় ভিড় করেছেন বাবর আলীকে একনজর দেখতে।