এভারেস্ট চূড়ায় ষষ্ঠ বাংলাদেশি হাটহাজারীর বাবর আলী

28

নিজস্ব প্রতিবিদক

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাবর আলী। ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে তিনি জয় করলেন এভারেস্ট। চট্টগ্রামের কোনো পর্বতারোহীর এটাই প্রথম এভারেস্ট জয়। গতকাল রোববার নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় বাবর মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে উড়ালেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
পর্বতারোহীদের সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নেপালের স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে আটটায় মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন বাবর আলী। ১১ বছর পর বাংলাদেশের কেউ আবার জয় করলেন এভারেস্ট।
তবে বাবরের এভারেস্ট অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান বলেন, দূরন্ত বাবর এখানেই থামছেন না। আগামী রোববার অর্থাৎ ২৬ মে এভারেস্টের সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ পর্বতশৃঙ্গ ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার লোৎসে বিজয়ের অভিযান শুরু করবেন বাবর, যেখানে এখনও পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির পদচিহ্ন পড়েনি। এদিন তিনি ক্যাম্প-৪ এ নেমে মাঝরাতে আবারো শুরু করবেন দ্বিতীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা এবং সব অনুকূলে থাকলে ২৭ মে সোমবার ভোরে পৌঁছে যাবেন পর্বত লোৎসের চূড়ায়। এর আগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের আমা দাবালাম চূড়া জয় করেছেন বাবর। বাবরের আগে আরও পাঁচজন এভারেস্ট জয় করেন। ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের শীর্ষে ওঠেন মুসা ইব্রাহীম। ২০১১ ও ২০১২ সালে দু’বার এভারেস্ট জয় করেন এম এ মুহিত। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন নিশাত মজুমদার। একই মাসের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এভারেস্ট। ২০১৩ সালের ২০ মে এভারেস্ট জয় করে নামার পথে মারা যান সজল খালেদ, যিনি পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে পর্বতজয় করেছিলেন। সেই অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর পর গত ১১ বছরে আর কোনো বাংলাদেশি এভারেস্টের চূড়ায় উঠেননি। ১১ বছর পর বাবর আলী আবার লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশিদের জন্য স্বপ্নযাত্রার পথে হাতছানি দিলেন।
পেশায় চিকিৎসক বাবর আলী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চরের লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগম দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। এই তরুণ চিকিৎসক নানা স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিজেকে জড়িত রেখেছেন। করোনায় সময় তার ভ‚মিকা বেশ প্রশংসনীয় ছিল। ৩৩ বছর বয়সী বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর শুরু করেন চিকিৎসা পেশা। তবে থিতু হননি। চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। সাইক্লিংয়ের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মি.), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মি.), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মি.), মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১২ মি.) ও চুলু ইস্ট (৬ হাজার ০৫৯ মি.) পর্বতের চূড়ায় উঠেছেন এই তরুণ।
উল্লেখ্য, বাবর আলী গত ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে তার এভারেস্ট জয়ের স্বপ্নের কথা জানান। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এভারেস্ট জয়ে তার অভিযান। ৪ এপ্রিল নেপালের কাঠমান্ডু থেকে পৌঁছান লুকলাতে। ১০ এপ্রিল এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পে পৌঁছান। এরপর একমাস অপেক্ষার পর ১৪ মে শুরু হয় তার চূড়ান্ত অভিযান। ওইদিনই তিনি দ্বিতীয় ক্যাম্পে, ১৮ মে তৃতীয় ক্যাম্পে এবং ১৯ মে ভোরে ক্যাম্প ফোরে পৌঁছান। ১৯ মে সকালে তিনি ‘ডেথ জোন’ নামে পরিচিত ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতায় শৃঙ্গে আরোহণ করে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেন।
ভার্টিক্যাল ড্র্রিমার্স এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই অভিযানে বাবরের সাথে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং পর্বতারোহণ গাইড বীর বাহাদুর তামাং।
২০১৪ সালে পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স প্রতিষ্ঠার পর হতেই ক্লাব সতীর্থদের নিয়ে নেপাল এবং ভারতের বহু পর্বতে অভিযান করেছেন বাবর। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি সামিট করেছেন নেপালের আমা দাবলাম পর্বত।
এই অভিযানের মোট খরচ হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। এতে মূল পৃষ্ঠপোষক ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড। সহ-পৃষ্ঠপোষক এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।