এবার সফল হবেন তো মাহতাব-নাছির?

30

রাহুল দাশ নয়ন

চতুর্থ ধাপে পিছিয়ে দেয়ার পর পঞ্চম ধাপে আবারও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি।
এর আগে প্রথম দফায় ২০২২ সালের ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা, ১৮ ডিসেম্বর তৃতীয় দফা এবং ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই চতুর্থ দফা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্ধারিত সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে যায়।
কার্যকরী কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যেই ইউনিট আওয়ামী লীগের অসমাপ্ত সম্মেলন করতেই হবে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো শেষ করতে হবে। সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য থানাভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা যদি সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অপারগ কিংবা ব্যর্থ হন তাহলে এই কমিটিগুলো বাতিল হিসেবে বিবেচিত হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে তৃণমূল স্তরে নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। তাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন নেতা যদি ব্যর্থ হন তার যোগ্যতা ও দক্ষতা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর নেতৃত্ব যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, দক্ষতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দলীয় আদেশের প্রতি আনুগত্যের বিষয়সহ সমাজে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে নেতৃত্ব ও পদ-পদবীতে কোন অবাঞ্চিত ও জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ কোন ব্যক্তি যাতে আসীন হতে না পারে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় ঘটলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দায়ী হতে হবে।
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আন্দোলন-সংগ্রামে এবং দল ও জাতির সংকট উত্তরণে সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসু ও কার্যকর অবদান রেখেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক কার্যক্রম ও বিষয়ভিত্তিক ইস্যুতে সবসময় রাজপথে ছিল এবং বর্তমান নেতৃত্ব অবশ্যই কর্মীবান্ধব হিসেবে সকলের আস্থা অর্জন করেছে। এই আস্থা ও বিশ্বাসকে অবশ্যই ধরে রাখতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর আওতাধীন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যে নির্ধারিত তারিখ ও সময়সূচি করে দিয়েছেন তার জন্য তাকে ধন্যবাদ। নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী মহানগর আওয়ামী লীগসহ থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট স্তরে সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা মুখিয়ে আছেন। এসকল সম্মেলনের মাধ্যমেই দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সকলস্তরের নেতাকর্মীকে আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে হবে। এই কার্য-পরিধি পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই শতভাগ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে এবং কোন ধরনের দলীয় আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা বিরোধী আচরণকে কিছুতেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। আমাদের মধ্যে অবশ্যই নেতৃত্ব ও পদ-পদবীর জন্য প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের মতো একটি বিশাল সংগঠনে এই প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার মত কোন ঘটনা বা আচরণ যাতে না হয় সেদিকেও সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাব হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন, শফর আলী, শেখ মাহমুদ ইসহাক, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, সম্পাদনমন্ডলীর সদস্য সৈয়দ হাসান মাহমুদ সমশের, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করলেও এবারও নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হওয়া নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। গত ২০ জুন নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিজেদের মতামত তুলে ধরলে আবারও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। এ দ্বন্দ্বের পর থেকে যথাসময়ে সম্মেলন হওয়া নিয়ে শঙ্কা জাগে। সর্বশেষ গতকালের কার্যকরী কমিটির সভায় নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উপস্থিত না থাকায় শঙ্কা আরও ঘনিভূত হয়। সম্মেলনের আগমূহূর্তে মেয়র রেজাউল করিমকে ঘিরে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে নগর আওয়ামী লীগে।
২০২২ সালে সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর গত দুই বছরে ১৯১টি ওয়ার্ড, ইউনিট ও থানা ইউনিটের মধ্যে ১২১টি ইউনিটের সম্মেলন হয়েছে। বাকি থাকা ২৭টি ইউনিট, ২৯টি ওয়ার্ড ও ১৪টি থানা ইউনিটের সম্মেলন এখনো বাকি রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বাকি থাকা ৭০ ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন করা কঠিন হবে। কারণ, শোকের মাস আগস্টে সম্মেলন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকে আওয়ামী লীগ। যে কারণে নগর আওয়ামী লীগ দেড় মাসের মতো সময় পাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করে নগর সম্মেলন করা অনেকটা চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা বলেন, সম্মেলন নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিরোধ এখন প্রকাশ্যে। নগরে সম্মেলন করতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু আরেক পক্ষ ঢাকা থেকে কমিটি ঘোষণা করতে চায়। এমনও হতে পারে সম্মেলন নগরে হয়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে এ সম্মেলন নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। এই দুই নেতা এবার সফল হবেন নাকি পঞ্চম বারের মতো সম্মেলন পিছিয়ে ব্যর্থ হবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আকষ্মিক মৃত্যুর পর সেই শূন্য পদে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে ছয় বছর পর গত বছরের ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তাকে ভারমুক্ত করে সভাপতির দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।