এবার পাইপলাইনে জ্বালানি তেল যাবে ঢাকায়

50

মনিরুল ইসলাম মুন্না

এতোদিন সড়ক, রেল ও নৌপথে ঢাকাসহ সারাদেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হতো। এবার শিগগিরই পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকায় যাবে জ্বালানি তেল। এতে একদিকে সময় সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে কমে যাবে পরিবহন ব্যয়ও। তাছাড়া পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হলে চুরিসহ সিস্টেম লসও কমে আসবে। এরইমধ্যে প্রকল্পের ৮৫ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত রবিবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) কর্নেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি সিভিল ওয়ার্কও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন মেকানিকাল ওয়ার্কের মধ্যে মেশিনারি স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। সর্বশেষ আমরা অটোমেশনের কাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধনে চলে যেতে পারবো।আশাকরি, তিন-চার মাসের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পটি আরও দুই বছর আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় বিলম্বিত হয়েছে। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির কাজ শেষে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু হবে। এতে কোটি কোটি টাকার পরিবহন ব্যয়ের পাশাপাশি সময়ও সাশ্রয় হবে। তেল চুরিসহ সিস্টেম লসের কবল থেকেও বহুলাংশে মুক্তি মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৬০ লাখ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়। এই তেলের ৪০ ভাগই ব্যবহৃত হয় ঢাকা এবং সন্নিহিত অঞ্চলে। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল চট্টগ্রামে খালাস করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে পরবর্তীতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক, নৌ ও রেলপথে পরিবহন করা হয়। বছরে ২০ লাখ টনেরও বেশি পরিশোধিত জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম থেকে সড়ক, নৌ, রেলপথে পরিবহনকালে বিভিন্ন সময় লোপাটের অভিযোগ ওঠে। তাছাড়া নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহনকালে তেল চুরি করে সাগরের পানি মিশিয়ে দেয়ার অভিযোগও বহু পুরনো। সড়ক ও রেলপথেও ঘাটে ঘাটে তেল চুরির বহু সংবাদ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সিস্টেম লসের নামে এসব চুরি ও লোপাটের ঘটনা সামাল দেয়া হলেও বিপিসি কোটি কোটি টাকার লোকসানের কবলে পড়ে। এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং আলাপ আলোচনার পর ২০১৮ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটির আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ও ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার ভ‚গর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতা এবং করোনাকালে কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানান বিপিসির কর্মকর্তারা।
তারা জানান, প্রকল্পের কাজের শুরুতেই নানা জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় সময়ক্ষেপণ হয়। পরে কোভিডের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়। ফলে কাজের গতি প্রত্যাশিত হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্প ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। জমি অধিগ্রহণ খরচও বেড়েছে। সবকিছু মিলে বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। তবে এর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সঞ্চালন হবে।
বিপিসি’র পরিচালক (অপা. ও পরি.) এবং সরকারের অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক পূর্বদেশকে বলেন, এ প্রকল্পের কারণে বিপিসির কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সিস্টেম লস কমে যাবে। সাগরের তলদেশ দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু করার সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহের এই পাইপলাইন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা খাতে বড় ধরনের সক্ষমতা অর্জন করবে। পুরো প্রকল্পের ৮৫ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৫ শতাংশ কাজ কয়েকমাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আশাকরি, সেপ্টেম্বরে আমরা তেল সরবরাহ করতে পারবো।