‘এখনও সিন্ডিকেটের দখলে বাজার’

9

মনিরুল ইসলাম মুন্না

‘দু-একটি সবজি বাদে সব সবজির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকার ওপরে। সবজির এত দাম হলে স্বস্তি মেলে কী করে? আমরা তো ভেবেছিলাম নতুন সরকার ঠিকঠাকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না। বাজার এখনও সিন্ডিকেটের দখলেই রয়ে গেছে।’ গতকাল শুক্রবার নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা এমন মতামত জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘সবজিতে বাজার ভরপুর। অথচ দাম বেশি। দু-তিন রকম সবজি কিনলেই এক-দেড়শো টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে সবজি কিনে খাবো, তারও উপায় নেই। আমাদের মতো নি¤œ আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে’।
নগরীর বাজারে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলার পাশাপাশি বাজারে বেগুন, পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙা ও করলার পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু এত বাহারি সবজি থাকার পরও দাম আগের মতোই বেশ চড়া। ফলে স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের। আবার আলু ও পেঁয়াজের শুল্ক কমালেও বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে দাম।
বিক্রেতাদের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে সবজির দাম বাড়তি থাকলেও সপ্তাহ ধরে কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় সেগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।
গতকাল নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের বাজারে তেমন দেখা মিলেনি। শিমের পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের সবজি বাঁধাকটি ও ফুলকপি। ছোট আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। আজকের বাজারে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬০ টাকা করে। তবে তুলনামূলক দাম কমার তালিকায় আছে মুলা। শীতের আগাম এ সবজিটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো ও গাজরের দাম এখনও চড়া। পাকা টমেটো আগের সপ্তাহের মতো প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি।
এদিকে শিমসহ নতুন কিছু সবজি আসায় কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে করলা, ঝিঙে, বরবটি, বেগুন, পটল, ঢেঁড়স, ধুন্দলসহ সব ধরনের সবজি।
করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস। বাজারে সবচেয়ে কমদামি সবজি হিসেবে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে।
সবজির দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতা আবুল খায়ের বলেন, বাজারে তুলনামূলক সবজির দাম কিছুটা কমই। তবে যেগুলো নতুন এসেছে সেগুলোর দাম একটু বেশি। আজকের বাজারে শিম বিক্রি করছি ২০০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে শিম ছিলই না। শিমসহ ২/৪ আইটেমের সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার নতুন করে এসব সবজি উঠতে শুরু করলে এগুলোরও দাম কমে যাবে।
অপরদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের খাবার ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি একশ ১২২০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতিপিছ ১২ টাকা ২০ পয়সা। সে ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে। তবে খুচরা দোকানে ১৫ টাকার নিচে ডিম বিক্রি হচ্ছে না।
আবার দেশে আলু এবং পেঁয়াজের বিদ্যমান বাজারমূল্য ও সরবরাহ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা ক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে দিয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণক‚লক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবনা মোতাবেক এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। অথচ এর একদিন পর (গতকাল শুক্রবার) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আগের মতো ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আলুও আগের মতো ৬০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ, আলু কিনে এনে বাকলিয়ার স্থানীয় মুদির দোকানে বিক্রি করেন খায়রুল আলমগীর নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ১২০ টাকায় এবং আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আজও সেই দামই চলছে। পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার তা শুনেছি কিন্তু বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ আমি বেশি দামেই পাইকারি বাজার থেকে কিনে এনেছি। যে পরিমাণ মাল এনেছি এটা আরও ৩/৪ দিন চলবে আমার দোকানে। এটা শেষ হলে ফের মাল আনবো, তখন যদি কম দামে পাই তাহলেই কম দামে বিক্রি করব।
এদিকে চকবাজারের ব্যবসায়ী আলী হোসেন পেঁয়াজের দাম বিষয়ে বলেন, আজ (গতকাল) সকালেই আমি পাইকারি বাজার থেকে আলু পেঁয়াজ কিনে এনেছি। পাল্লা হিসেবে (৫ কেজি) কিনে সব খরচ বাদে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে ১১০ টাকা। এখন পরিবহন করে নিয়ে আসার পর খুচরা ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। একই ভাবে আলুর পাল্লা পড়েছে ৫৫ টাকা এখন আমার দোকানে খুচরা বিক্রি করছি ৬০ টাকায় প্রতি কেজি। আজকে এগুলোর কেনা দাম আগের মতো ছিল, বাজারে যখন কম দামে কিনতে পারবো তখন খুচরা বাজারেও আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারবো।
এর আগে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে পেঁয়াজ, আলু, সার ও কীটনাশকের ন্যায় নিত্যপণ্যের শুল্ক ও ম‚ল্য সংযোজন কর কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে এনবিআরকে নির্দেশ দেন।
প্রজ্ঞাপনে আলুর আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে প্রযোজ্য ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা বহাল থাকবে। আশা করা যায়, এসব নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহারের ফলে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমে যাবে এবং ভোক্তাদের স্বস্তি দেবে।