এক হাজারের বেশি প্রকল্প নির্মাণে জড়িত কনকর্ড গ্রুপ

101

 

স্বাধীন বাংলাদেশজুড়ে চলছে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কাজ। সেই সময়ে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয় কনকর্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির। কাজে লেগে গেলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান এস এম কামালউদ্দিন। প্রথম কাজ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি সেতু পুনঃনির্মাণ। সেই থেকে কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের যাত্রা আজও অব্যাহত আছে। এখন দেশের অন্যতম বড় নির্মাণ কোম্পানি এটি। বহুমুখী কাজের সঙ্গে যুক্ত কনকর্ড। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী এস এম কামালউদ্দিন শুরুতে এক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আট বছর। তারপর নিজেই স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠা করেন কনকর্ড কোম্পানি।
ঢাকা শহরের সুউচ্চ ও সুন্দর ভবন বা স্থাপনা মতিঝিলের ২০তলা শিল্প ব্যাংক ভবন, ২২তলা জীবন বীমা ভবন, জনতা ব্যাংকের ২৪তলা প্রধান কার্যালয় ৮০ ও ৯০ দশকের মধ্যে নির্মাণ করেছিল কনকর্ড। বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কার্যালয় ভবন, তিতাস গ্যাসের প্রধান কার্যালয়, টিঅ্যান্ডটি ভবন, বিমানবন্দরে ভিআইপি টার্মিনাল- এ রকম অসংখ্য ভবন ও স্থাপনা কনকর্ডের তৈরি। তবে এস এম কামালউদ্দিনের অন্যতম গৌরবময় কীর্তি- জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর বঙ্গভবনের সংস্কার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষ নির্মাণও করেছে এই গ্রæপ। কনকর্ডকে দেশের বাইরেও নিয়ে গেছেন এস এম কামালউদ্দিন। মধ্যপ্রাচ্যে তিনটি এবং সিঙ্গাপুরে একটি ভবন তৈরি করেছে এই গ্রুপ। সব মিলিয়ে দেশের মধ্যে এক হাজারের বেশি প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কনকর্ড গ্রæপ।
এখন আর শুধু নির্মাণকাজ নয়, রিয়েল এস্টেট, পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী উৎপাদন, থিম পার্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নামও কনকর্ড গ্রুপ।
এস এম কামালউদ্দিন কেবল ভবন নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। ভবন নির্মাণে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী নির্মাণসামগ্রী তৈরিতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কনকর্ড সর্বপ্রথম ভবন নির্মাণে ইটের পরিবর্তে হলো বøকের ব্যবহার শুরু করে। বালু, সিমেন্ট ও নুড়ি পাথর দিয়ে এই হলো ব্লক তৈরি করা হয়। এর ব্যবহারে নির্মাণ ব্যয়ও কম। বলা হয়, হলো ব্লক ব্যবহার করা হলে ব্যয় অন্তত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে। কারণ, একটি ব্লক পাঁচটি পোড়া ইটের সমান।
৯০-এর দশকে দেশে ব্লকের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেছিল হাউস অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই)। আর ১৯৯৮ সালে কনকর্ড গ্রুপ বাণিজ্যিকভাবে ব্লকের উৎপাদন শুরু করে। তারা নিজস্ব সব ভবন নির্মাণেই এই ব্লক ব্যবহার করছে। বর্তমানে কনকর্ড তিনটি কারখানায় হলো ব্লক তৈরি করছে। অন্যরাও তাদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে। কনকর্ড শুরু করেছিল, এখন সেই পথ ধরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে বøক তৈরি করছে। পোড়া ইটের পরিবর্তে হলো ব্লক ব্যবহার করতে এখন সরকারও তাগিদ দিচ্ছে।
কনকর্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহরিয়ার কামাল জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ করেছে কনকর্ড।
তার মধ্যে সাভারের স্মৃতিসৌধ, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শিল্প ব্যাংক ভবন, ইনডোর স্টেডিয়াম, আইডিবি ভবন, কনকর্ড পুলিশ প্লাজা অন্যতম। বাবা যখন আবাসন ব্যবসা শুরু করেন, তখনই বুঝতে পেরেছিলেন ঢাকা মেগা সিটিতে রূপ নেবে। এ চাপ সামলানোর উপায় হলো সব সুযোগ-সুবিধা কাছাকাছি হতে হবে, পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এ জন্য লেকসিটি কনকর্ডের মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। শুধু প্রকল্প হাতে নিয়েই বসে ছিলেন না এস এম কামালউদ্দিন, পাশাপাশি প্রকল্পটি যেন পরিবেশবান্ধব হয়, খোলামেলা থাকে, বাচ্চাদের খেলাধুলার জায়গা থাকে, এ চিন্তাও করেছিলেন।
লেকসিটি প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার করতে ১৯৯৮ সালে গড়ে তোলেন কনকর্ড রেডি মিক্সড অ্যান্ড কংক্রিট প্রোডাক্টস লিমিটেড। এটা নতুন কোনো প্রযুক্তি ছিল না, সারা বিশ্বে বেশ আগে থেকেই এমন ইট ব্যবহার হচ্ছে।
১৯৯৮ সালের পর প্রায় ২০০টি প্রকল্প করেছে কনকর্ড। এর সব কটিতেই ব্যবহার করেছে পরিবেশবান্ধব ইট, হলো বøক, ইউনিপেভার্স ও টাইলস। এখনো সব ভবন ও সড়কেও এসব সামগ্রী ব্যবহার করছে।
বিনোদন বা সময় কাটানোর জন্য একাধিক থিম পার্ক নির্মাণ করে লাখ লাখ মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে কনকর্ড। ঢাকার আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডম কমপ্লেক্স এবং চট্টগ্রামের ফয়’স লেকের এই থিম পার্ক এখন জনপ্রিয় দুটি নাম।
কোম্পানির অধীন প্রতিষ্ঠান: কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কন্সট্রাকশন লিমিটেড, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট এন্ড বিল্ডিং পণ্য লিমিটেড, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, কনকর্ড কন্ডোমিনিয়াম লিমিটেড, কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোং লিমিটেড, কনকর্ড রেডি-মিক্স কংক্রিট পণ্য লিমিটেড-১, কনকর্ড রেডি-মিক্স কংক্রিট পণ্য লিমিটেড-২, কনকর্ড কংক্রিট বøক প্ল্যান্ট লিমিটেড, কনকর্ড স্থপতি ও অভ্যন্তরীণ সজ্জা লিমিটেড, কনকর্ড স্থপতি ও প্রকৌশলী লিমিটেড, জেকন গার্মেন্টস লিমিটেড, কনকর্ড ফ্যাশন রপ্তানি লিমিটেড, কনকর্ড জমি লিমিটেড, কনকর্ড সাহচর্য লিমিটেড, কনকর্ড কমিউনিকেশন কোং লিমিটেড, লেক সিটি কনকর্ড বিদ্যালয়।