এক সংগ্রামী অপরাজিতা

2

ডেইজী মউদুদ

কাঞ্চনা বলেন, আমি একজন অপরাজিতা। আমার জীবনটা ৭১ এর যুদ্ধের মতো, নীর হারা পাখীর মতোই ভূমিহীন গৃহহীন এর মতোই। তবে, জীবনে কখনো হার মানিনি, হার মানবো ও না। যতক্ষণ না অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে নিজের পায়ের উপর নিজে দাঁড়াতে না পারি, ততক্ষণ লড়ে যাবো জীবনযুদ্ধে। সীতাকুÐের কাঞ্চনা আকতার জীবন সংগ্রামে বিজিত এক অপরাজিতা। তিনি বাড়বকুন্ড নতুন পাড়ার ৭, ৮ ও ০ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মেম্বার। কাঞ্চনার পথচলা একেবারে র্তণমূল থেকেই।
ছোটবেলা থেকে অনাদর আর অবহেলায় বেড়ে উঠা কাঞ্চনা জীবনযুদ্ধ আর কঠিন সংগ্রাম করেই পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। কাঞ্চনার পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি হলেও তিনি বর্তমানে সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের বাসিন্দা। কাঞ্চনার পিতার নাম মো. সোবহান আর মায়ের নাম তমুরা বেগম। চারবোন দুইভাইয়ের সংসার। বড় পরিবার। ফলে ছোটকাল থেকেই কষ্ট ই ছিল জীবনের সাথী। একসময় পিতা মাতা দুজনকেই হারায় কাঞ্চনা। ফলে লেখাপড়া করা তো দূরের কথা খেয়ে পরে বেঁচে থাকাও যেন দুঃসহ হয়ে পড়ে। সব ভাইবোনদের দেখা শোনা করতে গিয়ে কোন রকমে ক্লাস টেন পর্যন্ত কাঞ্চনা লেখাপড়া করেন। এরই মাঝে ছোট ভাইয়ের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কষ্টে নিয়মিত ডায়ালাসিস করে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছি। ২০০৭ সালে কাঞ্চনার বিয়ে হয়। এরই মাঝে তিন সন্তানের জননীও হন।
২০১৯ সালে কাঞ্চনা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হন। এখানে এসেই বুঝতে পেরেছেন, আসলে নারীদের কি কি মৌলিক অধিকার রয়েছে, নারীনির্যাতন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা এই জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান কিভাবে হয়, তা জানার সুযোগ হয়। আর ইউপি মেম্বার হওয়ার ফলে তিনি এখন অবহেলিত নারীদের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। নির্যাতীত নারীদের শালিস বিচার, বাল্য বিবাহ বন্ধ, কিশোর কিলোরীদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা সহ নানান কাজ করে থাকেন কাঞ্চনা। এসব কাজ করার মধ্য দিয়ে পরিবারে ও সমাজে ধীরে ধীরে কাঞ্চনার একটি সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি হয়। নিজে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না পেলেও নিজের সন্তানদের কে তিনি পড়ালেখা করাচ্ছেন। ভবিষ্যতে কাঞ্চনার আরো বড় পোস্টে নির্বাচন করার ইচ্ছে রয়েছে। অবহেলিত গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মানের উন্নয়নের লক্ষ্যেই তিনি এমন আশা পোষণ করেছেন। এই লক্ষ্য আর উদ্দেশ্যকে নিয়েই কাঞ্চনা দীর্ঘদিন থেকেই নিজেকে জনসেবায় যুক্ত রেখেছেন। বিশেষ করে এলাকার নারীদের নানাবিধ সমস্যার সমাধানে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন।নারী সমাজকে সচেতন করেন নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে। পাড়ায় মহল্লায় ছুটেন। এলাকায় কাঞ্চনা এখন অনেকের প্রেরণাস্বরূপ। তার কার্যক্রম ও সেবামূলক মনোভাব দেখে অনেক নারীই এখন এগিয়ে এসছেন, নিজেরা সচেতন হচ্ছেন, অন্যদের ও সচেতন করছেন।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক