এক বছরে শিক্ষার্থীদের আমানত কমেছে শতকোটি টাকা

6

দীর্ঘদিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অপরদিকে প্রতি মাসে বাড়ছে শিক্ষা ব্যয়ও। কিন্তু যে হারে প্রতিদিন মানুষের ব্যয় বাড়ছে সেই হারে বাড়ছে না আয়। ফলে এসবের প্রভাব পড়েছে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে। এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এক বছর ধরে যা ক্রমাগত কমে শতকোটি ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা; যা আগের মাস এপ্রিলে ছিল ২ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক মাসে আমানত কমেছে ২২ কোটি ৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০২৩ সালের মে মাস শেষে শিক্ষার্থীদের হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে এই শ্রেণির হিসাবে আমানত কমেছে ১০১ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাধারণত যেকোনো শ্রেণির হিসাবে আমানত অল্প হলেও বাড়তে থাকে। কারণ কেউ যদি নতুন করে টাকা জমা নাও দেয় তবুও আগের জমাকৃত আমানতের সুদ যোগ হয়ে মোট অঙ্ক বাড়তে থাকে। আর যদি গ্রাহকরা তার মুনাফার টাকা উত্তোলন করে ফেলে তাহলে হিসাব অপরিবর্তিত থাকে। তা ছাড়া নতুন বাড়তে থাকা হিসাবের আমানত যোগ হয়। আমানত কমে যাওয়ার অর্থ হলো নতুন করে যেসব হিসাব খোলা হয়েছে কিংবা আগের হিসাবে যে পরিমাণ টাকা জমা হয়েছে তার চেয়ে বেশি অঙ্কের টাকা উত্তোলন হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ আর্থিক চাপের কারণে শিক্ষার্থীরাও তাদের সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সাধারণত বছরের শুরুতে কিংবা শেষের দিকে অনেকের টাকা উত্তোলনের চাপ থাকে। অনেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেড়াতে যান। আবার অনেকে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে গিয়ে আমানত ভাঙেন। কিন্তু বছরের পুরো সময়জুড়ে শিক্ষার্থীদের আমানত কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে নিয়মিত খরচ মেটাতে হিমশিম অবস্থার মধ্যেই আমানত উত্তোলন করতে হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ঊর্ধ্ব মূল্যস্ফীতি এমনটাই ইঙ্গিত করছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ২০২৩ সালের জুলাই থেকেই আমানত কমে আসছে। গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, যা আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৫ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ২৩২ কোটি, অক্টোবরে ২ হাজার ২০২ কোটি, নভেম্বরে ২ হাজার ১৯৯ কোটি ও ডিসেম্বরে ২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ১৩৬ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ১০৯ কোটি এবং মার্চে বেড়ে হয় ২ হাজার ১২৮ কোটি টাকা।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা। এ পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।
এই অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন- সব ধরনের ফিস ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত এপ্রিলে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত ছিল ১ হাজার ৫৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর পরের মে মাসে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত কমেছে ২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
সাধারণত মূল্যস্ফীতি ও যোগাযোগব্যবস্থার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে শহরের মানুষ বেশি কষ্টে আছে বলে মনে করা হয়। তবে বর্তমানে গ্রামের মানুষও সমানভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার জরিপ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মূল্যস্ফীতির মাসিক হিসাব পর্যালোচনা করলে এমন চিত্রই দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবেও এর প্রতিফলন রয়েছে। গ্রামের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঞ্চয় ভাঙতে শুরু করেছে।