এক টেলিফোনেই উল্টে গেল ভোটের ফল!

32

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও বিজয়ী ঘোষণার দুই ঘণ্টা পর অজ্ঞাত টেলিফোনে পাল্টে গেল হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিবি ফাতেমা শিল্পীর ভোটের ফলাফল। গতকাল বুধবার বিকেল ৪ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন বিবি ফাতেমা শিল্পী।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে ‘প্রজাপ্রতি’ প্রতীকের প্রার্থী শিল্পী ২০ হাজার ২২ ভোটে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান। এতে তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ‘ফুটবল’ প্রতীকে সাজেদা বেগম পান ১৯ হাজার ৫৩ ভোট। সন্ধ্যায় এ ঘোষণার পর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিবি ফাতেমা শিল্পীর কর্মী-সমর্থকরা উল্লাস করেন। কিন্তু দুই ঘণ্টা পর অজ্ঞাত টেলিফোন পেয়ে শিল্পীর পরিবর্তে সাজেদা বেগমকে ৩০ হাজার ৭১৫ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার।
এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে শিল্পী বলেন, এটি জালিয়াতি ও কারচুপির ফলাফল। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনরায় নির্বাচনসহ ফলাফল পাল্টানোর রহস্য উদঘাটন করা হোক। আমি ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ ও ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করবো।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হাটহাজারীতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট কারচুপির ঘটনায় পুরো নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সাজেদা বেগম পরাজয় মেনে নিয়ে বাড়িতে চলে যান। কিন্তু অজ্ঞাত টেলিফোন পাওয়ার পর ঘর থেকে ডেকে এনে তাকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এটি মূলত ইলেকশন নয়, সিলেকশন হয়েছে।
নিজেকে প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয়ী উল্লেখ করে শিল্পী বলেন, প্রথমে আমাকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। কিছুক্ষণ পর আমার ফলাফলে ত্রুটি আছে জানিয়ে আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং হোয়াটসঅ্যাপে ফলাফল পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। কিন্তু আমি বাড়ি না গিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে সেখানে অবস্থান করি। এ সময় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভ‚য়া রেজাল্ট সিট ঢুকিয়ে দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে দেড়-দুই ঘণ্টা পর আমাকে পরাজিত ঘোষণা করেন। আমি এর প্রতিবাদ করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদেরকেও মারধর করা হয়। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের ফলাফল একসাথে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও রহস্যজনক কারণে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীর ফলাফল দেড়-দুই ঘণ্টা বিলম্বে ঘোষণা করা হয়।
নিজেকে উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য দাবি করে শিল্পী বলেন, ২০০৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। ১০ মাসের বাচ্চাকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি করেছি, এটা কি আমার প্রাপ্য ছিল? বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোট জালিয়াতির এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না তা আমার জানা নেই। এটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াস মাত্র।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাইফুল আজম শাকিল, শেখ জামাল, মোরশেদ আলম, রায়হান তালুকদার ও মো. তৈয়ব প্রমুখ।
পূর্বদেশ’র হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে উপজেলা নির্বাচনে ডিসপ্লেতে ফলাফল প্রদর্শনের দেড়-দুই ঘণ্টা পর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফল পরিবর্তনের অভিযোগ উঠে।
ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিবি ফাতেমা শিল্পী জানান, গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘোষিত ডিজিটাল ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত ফলাফলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাকে নির্বাচিত দেখানো হয়। এর দেড়-দুই ঘণ্টা পর ফলাফল পরিবর্তন করে আরেক প্রার্থীকে পরিকল্পিতভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টার দিকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার স্বাক্ষরিত বেসরকারি ফলাফলে সাজেদা বেগমকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এরপর ভোট প্রত্যাখ্যান করে বিবি ফাতেমা শিল্পী উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, পরিকল্পিতভাবে তার প্রাপ্ত ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। তিনি পুনরায় ভোট গণনা এবং এ ঘটনা দ্রুত সুরাহা কামনা করেন। অন্যথায় তিনি আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
এ ব্যাপারে বেসরকারিভাবে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান বিজয়ী সাজেদা বেগম বলেন, আমি হেরে যাইনি। আমি কম ভোটের ব্যবধানে পৌরসভা এলাকায় জয়ী হয়েছি। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফলাফল ঘোষণার সময় হাটহাজারীর উত্তর দিকের ফলাফল আসার পর ৮৬টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পরপর আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিবি ফাতেমা শিল্পীকে বিজয়ী ঘোষণা করে। আমি সাথে সাথে বিষয়টি আমি স্থানীয় এমপি মহোদয়কে অবহিত করি। এ সময় এমপি মহোদয় বিষয়টি দেখছেন বলে আমাকে জানান। এরপর আমরা নিয়তিকে মেনে নিয়ে চলে যাই। এর মধ্যে এমপি মহোদয় কি করেছেন জানিনা, পরে জানতে পারলাম আমি জয়লাভ করেছি। তাছাড়া চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সাথে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভোটের ফলাফল বিশাল ব্যবধান ছিল।
ওইদিন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, এর আগে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। তার (ইউএনও) স্বাক্ষরিত ফলাফলেই বেসরকারিভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুটবল প্রতীকের সাজেদা বেগমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।