একুশ আমাদের মা

246

 

ফাগুন আসে।
ফাগুন আসা মানে, একুশে ফেব্রূয়ারি আসা!
ফ্রেব্রূয়ারি এলেই মনে পরে একুশ মাকে।
আমাদের প্রাণের মা!
কতো আপনার যেন। মা’র কথা, আদর, ভালোবাসার তুলনা হয়না।
সেই মা ১৯৫২ সালের। হলেও,মন বলে, অনেকদিনের!
১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রূয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ- সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেরণা।
সেই থেকে শুরু হয় বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন এবং একাত্তূরে নয় মাস পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
একুশে মা শিখিয়েছে মায়ের অক্ষর দান অ আ ই ক খ গ ঘ। শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার! শহীদ মিনার দেখলেই মনে পরে রফিক, বরকত, শফিক, সালামের ছবি। ওরা অকুতোভয় বীর!
পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেই যাকে প্রথম ডাকি,- সে হলো মা। সেই মায়ের ভাষায় কথা বলার সুযোগটা দিতে চাইনি পাকিস্তানীরা।
বাঙালিরা জেগেছে ঐ বীর শহীদের তরতাজা রক্তের আস্ফালন দেখে। তারা আর থামেনি,দুর্বার গতিতে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
পৃথিবীর সবাইকে দেখিয়েছে,একমাত্র বাঙালিদের জন্য ফেব্রূয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে অনন্য গৌরবোজ্বল দিক। তার সুনির্দিষ্ট কারণ আছে বৈকি! পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি ভাষার জন্য এমাসে জীবন দিয়েছিল। ওরা মায়ের জন্য সব পারে।
বাংলাদেশ আমাদের জন্মভূমি।তাই প্রাষ খুলে মা ডাকি।
যাদের স্বপ্নে এইদেশ, বাংলাভাষা, তাঁরা জানতেন, তাঁদের স্বপ্ন পূরণ হবেই একদিন। তাঁদের আজ অনেকেই নেই। নেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতা এবং সম্মান খোয়ানো মা বোন।
তারা এখন শুধু স্মৃতি,বাংলাভাষাকে জাগিয়ে রাখার প্রেরণা।
তাঁদের স্বপ্ন রঙিন আশার ভিত প্রোথিত হয়েছিলো বায়ান্ন সালের অগ্নিগর্ভ বৈচিত্রময় এক আন্দোলনে। যার নাম সবার মুখেমুখে, -ভাষা আন্দোলন।
একুশ এলেই আমরা জাগিয়ে উঠি,বাংলার ভাষার এবং মায়ের জন্য। তারপরে সব ভুলে যাই। আজ সত্যি কি বাংলাদেশে ভাষার স মর্যাদা আছে? দেখি? দেখে মন ভরি,চোখ জুড়ায়।
মুখে ঠিকই বলি। বাস্তবে ভাষা পড়েছে মহা সংকটে।“আজকাল দেশের তরুণেরা ভাবে বাংলা না জানা বা বলতে না পারাটা আধুনিক ফ্যাশন”।
আমাদের ভাষার একটি ঐতিহ্য ইতিহাস আছে। যেটা অন্য কারো বিরুদ্ধে কিম্বা প্রতিদন্ধী ছিলোনা। লক্ষ্য ছিলো , শুধু গর্বিত মা এবং প্রিয় ভাষাকে মুক্ত করা।
আজ এই বাংলাভাষাকে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ ওরা সবাই বুঝতে পেরেছে, এটা আমাদের মায়ের অধিকার। এই মায়ের সন্তানেরা রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ওরা আজ ভীতু- কাপুরষ নয়।
ওরা বীর! যোদ্ধা! মৃত্যুঞ্জয়ী!
শুধুবাংলাদেশে নয়,আজ সারা বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ হচ্ছে, বইমেলা হচ্ছে। পরিধি হয়তো ছোট। ক্ষতি কি? হচ্ছেতো! বাঙালির!
দুঃখ হয়। যখন একুশ চলে যায়। কারো কিছুই মনে থাকেনা। আমরা কি সত্যি বাঙালি? শহীদের জন্য যে শহীদমিনার আছে? বাংলাভাষার যে একটি ঐতিহ্য আছে? আমরা য বাঙালি নামের জাতি। কী নেয় আমাদের। তারপরেও ভুলে যাই! কি করে ভুলি?
একুশ বা ফাগুণ এলে সবাই কাঁদি। বাংলাভাষার জন্য,মায়ের জন্য। অথচ বীরের বেশে বলি,-এই মাসটি আমাদের গর্বেও মাস।
শুধু মিডিয়ায় আবদ্ধ রাখবো কেন? এই সত্য কথনটি আমরা পরিবারে,সমাজে, তার চলনে বলনে এবং শুদ্ধতায় সুদুঢ় নিশ্চিত করতে পারি।
আমরা এখনও বাংলাভাষায় কথা বলতে দ্বিধাবোধ করি। বাঙালি পরিচয় দিতে লজ্জা করি। উন্নত দেশিরা নিজের ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। আমরা পারিনা। আমাদের এতো ভয় কিসের? আমাদের ভাষাতো এখন আন্তর্জাতিক ভাষা। মাথা উঁচিয়ে চলতে পারি। বাংলায় কথা বলতে পারি।
আমাদের জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু বিদেশের মাটিতে প্রথম বাংলাভাষায় কথা বলেননি? আমরা পারবোনা কেন?
আমাদের উচিত, এই ফেব্রূয়ারি মাস থেকেই আমাদের আগামি প্রজন্মদের, সন্তানদের “একটি করে বাংলা ব্যাকরণ আর বাংলা বই পড়তে দেই। তাদের সাথে আমাদের মেধা মণীষা নিশ্চিত করি”।
আমরা যখন ছোট ছিলাম,তখন থেকেই শহীদ মিনারে যাচ্ছি। এখনও যাই। হাতে প্লেকার্ড, তা’তে লেখা অ আ ই ও ঐ,ক খ গ ঘ।
শহিদ স্মৃতি অমর হউক। কী সুমধুর আহবান! চলো সবাই ছুটে যাই শহীদ মিনারে। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই ফুল দিয়ে।
স্নিগ্ধ শীতে খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে গাই,-আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?