একটি ইভিএমও ত্রুটিমুক্ত নয়

2

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কোনো শেষ না থাকলেও যন্ত্রগুলোর ওয়ারেন্টি শেষ। মেয়াদ থাকলেও নেই ত্রুটির কোনো শেষ। বর্তমানে প্রতিটি মেশিনেই কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাতে থাকা সচলযোগ্য মেশিনগুলো দিয়েই স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করতে চায় কমিশন। সামনে ঢাকার দুই সিটি ভোটও হতে পারে ইভিএমে। কিন্তু শতভাগ ত্রুটিহীন মেশিন নেই একটিও। এই অবস্থায় ইভিএমে দক্ষ কারিগরি লোকবল তৈরির প্রতি জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে গত ৩০ জুন দেশসেরা প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইসির এক সভায় যন্ত্রটির কারিগরি উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
একজন নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আমাদের বর্তমান যে মেশিনগুলো আছে এগুলোর ওজন অনেক বেশি। ওজন কমানোর কথা হয়েছে বৈঠকে। এছাড়া কারিগরি উন্নয়ন তথা ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া এই মেশিনগুলোর ব্যয় অনেক বেশি। প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এটা কিভাবে কমানো যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ইভিএমের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কেবল একটি তা হলো বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। নতুন করে ইভিএম উৎপাদনে গেলে কার কাছ থেকে নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তো এখনো চ‚ড়ান্ত নয়। সিদ্ধান্ত হলে আমরা ওপেন সোর্সের মাধ্যমেও যেতে পারি।
বৈঠকের বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হায়দার আলী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. মাহফুজুল ইসলামের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক একটি বৈঠক হয়েছে। এতে ভিভিপ্যাটযুক্ত করা, ওজন কমানো ও ব্যয় কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডার বা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বসতে পারে কমিশন। সবার মতামত পেলে ইভিএমের কারিগরি উন্নয়নে হাত দেবে ইসি।
ইসি সচিব শফিউল আজিম এ নিয়ে বলেন, আমরা ইভিএমকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। এজন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থার জন্য একটি ওয়্যারহাউজ তৈরি করতে একটি জায়গা চাওয়া হয়েছে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে। সেখানে নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম তৈরির করার পরিকল্পনা রয়েছে। কেননা, নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো উচিত। আমরা সামনের সব স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করবো। খবর বাংলানিউজের
জানা গেছে, এক-এগার সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোটযন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত উন্নত মানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়।