উত্তেজনা ভুলে সামনে তাকাতে চান লু

13

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে ‘অনেক উত্তেজনা’ তৈরি হয়েছিল বলে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, এসব সরিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সামনে তাকাতে চায়, পেছনে নয়।
গতকাল বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।
দুই দেশের জনগণের মধ্যে আস্থা পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করাই তার এবারের বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেন ডনাল্ড লু। খবর বিডিনিউজের।
ডোনাল্ড লু বলেন, বাংলাদেশ সফরে এসে গত দুই দিনে আমি দুই দেশের জনগণের মাঝে পুনরায় আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা জানি, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক টেনশন ছিল। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন (বাংলাদেশে) অনুষ্ঠানে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম। এতে কিছু টেনশন তৈরি হয়েছিল। আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক।
সহকারী এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই, পেছনে নয়। আমরা সম্পর্ক জোরদারের (বাংলাদেশের সঙ্গে) উপায় খুঁজে বের করতে চাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্কের পথে অনেকগুলো কঠিন বিষয় রয়েছে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন। তাকে বলেছি কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হলে ইতিবাচক সহযোগিতার ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে চাই।
কঠিন বিষয় বলতে ‘র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং শ্রম সংস্কার, মানবাধিকার ও ব্যবসায় পরিবেশের সংস্কার’ এর কথা বলেছেন এই মার্কিন সহকারী মন্ত্রী। এসব কঠিন ইস্যুতে কাজ করার জন্য ইতিবাচক সহযোগিতার ভিত্তিতে যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে এগোতে চান তিনি।
তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং ক্লিন এনার্জির মতো ইস্যুতে সহযোগিতার বিষয়ে আমাদের আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে লু বলেন, সরকারকে স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলতে এবং দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্র বাড়াতে আমাদের অনেক কিছু করার আছে।
এ সময় ঢাকা সফরের আরেকটি কারণের কথা বলেছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তারা ভাষায়, বাংলাদেশে করের আওতা কীভাবে বাড়ানো যায়, যার ভিত্তিতে সব বাংলাদেশি তার ভাগের দেনাটা পরিশোধ করতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য সম্প্রতি তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মন্ত্রী (পররাষ্ট্রমন্ত্রী)। এবারের সফরের অভিজ্ঞতাকে ‘চমৎকার’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।
তিন দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছান ডনাল্ড লু। ওই দিন রাতে গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজের মধ্য দিয়ে তার সরকারি কর্মসূচি শুরু হয়।
গতকাল বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন তিনি।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতিও ঘোষণা করেছিল ওয়াশিংটন। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হবে না।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসে সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা বললেন ডোনাল্ড লু।