উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম কলেজ ও আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম পরিবার

13

মো. বাদশাহ্ আলম

চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানার অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী কাট্টলীর উত্তর পার্শ্বস্থ চট্টগ্রাম তোরনের পশ্চিম পার্শ্বে ২৭ মে ১৯৯৪ খ্রি., ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪০১ বঙ্গাব্দ চট্টলার কৃতী সন্তান, বিশিষ্ট শিল্পপতি, সমাজসেবক ও গরীব দুস্থ অসহায়য়ের অকৃত্রিম বন্ধু, শিক্ষানুরাগী ভ্রাতৃদ্বয় দানবীর আলহাজ্ব মো: আবু তাহের ও আলহাজ্ব মোঃ মনজুর আলম-এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও অর্থায়নে তাঁদেরই পিতা মরহুম হযরত খাজা আবদুল হাকিম শাহ্্ আল মাইজভান্ডারী (রহঃ) ও মাতা মরহুমা আলহাজ্ব মোস্তফা খাতুন এর নামে ও তাঁদের স্মৃতি স্মরণে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুল মজিদ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে উত্তর কাট্টলী আলহ্জ্বা মোস্তফা-হাকিম মহাবিদ্যালয় নামে শিক্ষার প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, জ্ঞান তাপস, বহু গ্রন্থের প্রণেতা, শিক্ষাগুরু, সর্বজন শ্রদ্ধাস্পদ, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এ.এ. রেজাউল করিম চৌধুরীর হস্তে ও সুদক্ষ পরিচালনায় অত্র এলাকায় শিক্ষার আলো চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ৪ নভেম্বর ১৯৯৪ খ্রি. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মোঃ ইউনুছ মিয়ার হস্তে একাডেমিক ভরনের শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে মহাবিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ও উন্নয়নে আরো একধাপ এগিয়ে যায়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক কে.এম হাবিবুল্লাহ ১৮ অক্টোবর ১৯৯৬ খ্রি. ডিগ্রী ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে অত্র মহাবিদ্যালয় ডিগ্রী কলেজে রূপান্তরিত হয়। এরপর উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ডিগ্রী কলেজ নামে পরিচিতি লাভ করে ।
সুযোগ্য কলেজ পরিচালনা পর্ষদ, নিবেদিত-আন্তরিক, অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক মন্ডলীর একনিষ্ঠ শিক্ষাদান ও শিক্ষার মান উন্নয়ন, অধ্যক্ষের নিপুন হস্তে প্রশাসন পরিচালনা, এলাকাবাসীর সুহৃদ সহযোগিতা, স্থানীয় প্রশাসন ও বিদ্যোৎসাহী সুধীজনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় বিশেষ করে প্রতিষ্ঠাতা মহোদয় আলহাজ্ব এম. মনজুর আলম-এর প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে ও নিরলস প্রচেষ্টায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটি অরাজনৈতিক ও সন্ত্রাস মুক্ত সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ সমৃদ্ধ সুশৃঙ্খল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বৃহত্তর চট্টগ্রামে সুনামের সহিত বেসরকারী কলেজের মধ্যে অন্যতম স্থান অধিকার করে।
২০০১ সালের ৯ এপ্রিল সেই মহান জ্ঞান তাপস অধ্যক্ষ এ.এ রেজাউল করিম চৌধুরী পরলোক গমন করলে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পদক প্রাপ্ত, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম প্রফেসর ফজলুল কাদের চৌধুরী অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। শিক্ষার গুনগত মান, ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি, চুড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্যের উর্ধ্বগতি, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল বিশেষ করে কলেজর মান ও উন্নয়নের গতি ক্রমান্নয়ে দ্রুততর হয়।
আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক অত্র কলেজের ছাত্রদের এবং এলাকার জনসাধারণের সুবিধার্থে এবাদতের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় হযরত তৈয়ব শাহ (রঃ) জামে মসজিদ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে এলাকার চাহিদা মোতাবেক কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয় আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম কেজি এন্ড হাই স্কুল। জনসেবা ও মানবতার লক্ষে স্থাপিত হয় আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম মাতৃসদন। ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে তাহেরিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, আলহাজ্ব তাহের-মনজুর ইসলামিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। তাই বর্তমানে অত্র এলাকার সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতির অবস্থার উন্নয়ন, জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, সাধারণ শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা হারের দ্রæত উর্ধ্বগতি আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম পরিবারের অন্যতম অবদান।
অত্র কলেজে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের নিয়মিত পাঠদান ছাড়াও লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাটমিন্টন, ভলিবল ইত্যাদি খেলাধুলার নিয়মিত চর্চা ও প্রতিযোগিতা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্ত:কক্ষ ক্রীড়া চর্চা ও প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক পর্বের অনুশীলন ও অনুষ্ঠান, বি.এন.সি.সি., রোভার স্কাউট ও যুব রেড ক্রিসেন্ট এর নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও বাৎসরিক ক্যাম্পিং, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্মাতক পর্যায়ে নবীন বরণ ও বিদায়ী ছাত্রদের সংবর্ধনা, নবাগতদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (স:) মাহফিল, কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের মরহুম পিতামাতার মৃত্যু বার্ষিকী, বার্ষিক স্মরণসভা, পূজা ইত্যাদি ছাত্র-ছাত্রীদের দৈহিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধন ও সৃজনশীল মননশীলতার পরিচায়ক। উল্লেখ্য যে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্র পাড়ে কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে স্টেডিয়াম ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণ করা হয় যেখানে নিয়মিত খেলাধুলা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং অনুশীলন চলছে।
বর্তমানে আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ডিগ্রী কলেজ শিক্ষা পর্যায়ে কলেজের শুধু মান বৃদ্ধি করেনি বরং উন্নত পর্যায়ের অবস্থান নির্দেশ করে। বিশেষ করে ২৪ মে’ ২০১৪খ্রি. ২০ বৎসর পুর্তি ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পুনর্মিলন উপলক্ষে ছাত্র-ছাত্রী ও অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে মহামিলন মেলা। বিগত ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স কোর্সের স্বীকৃতি প্রাপ্তির মাধ্যমে উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ডিগ্রী কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর এক যুগান্তকারী সফলতা ও উল্লেখযোগ্য অর্জন। বর্তমান সময়ে ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা ও দর্শন বিষয়ে অনার্স কোর্স বিদ্যমান এবং হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স (স্নাতকোত্তর শ্রেণি ) চালু রয়েছে। অন্যান্য চলমান বিষয়গুলোর অনার্স কোর্স খোলার প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে অভিজ্ঞ, ধৈর্যশীল ও একনিষ্ঠ প্রায় ৭৪ জন শিক্ষক ও ৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন বিষয়ে ও কর্মে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জনাব মোহাম্মদ আলমগীর অধ্যক্ষ পদে আসীন হয়ে কলেজ পরিচালনা করছেন। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি, স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) শ্রেণি ও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শ্রেণিতে নিয়মিত প্রায় ৮ হাজার ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত আছে ।
আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম পরিবার শুধু শিক্ষার প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেই ক্ষান্ত হয়নি; দেশের আর্ত মানবতার সেবায় জন কল্যাণে, জনস্বার্থে, সমাজসেবায় ও সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও আলহাজ্ব হোসনে আরা-মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সহযোগিতার দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত। বর্তমানে রমজানে গরীব-দুস্থদের মাঝে সেহ্রী ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ঈদ ও পার্বণে দরিদ্র ও বিধবাদের মাঝে বস্ত্র সামগ্রী বিতরণ, বৎসরের প্রারম্ভে গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের মাঝে নতুন পুস্তক বিতরণ, গরীর দুঃস্থ অসুস্থ অসহায় পুরুষ মহিলাদেরকে মাসিক চিকিৎসা ভাতা প্রদান, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাৎক্ষণিক খাদ্য-বস্ত্র, ঔষধ, আর্থিক সাহায্য ও বাসস্থান সামগ্রী প্রদান; গরীব শিক্ষার্থী, বিয়ে-শাদী, অসুখে-বিসখে, মউতে, দাফনে-কাফনে, জেয়াফতে শোকে-স্মরণে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, স্কুল-কলেজে অকাতরে দান, উষ্ণতায় ও দুষ্প্রাপ্যতায় পানি সরবরাহ, প্রবীন পুরুষ- মহিলাদের আবাসন ব্যবস্থা ও দুঃস্থ-বয়স্ক গরীব অসহায়দেরকে সাপ্তাহিক সাহায্য প্রদান ইত্যাদি একক ব্যক্তিগত বা আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও আলহাজ¦ হোছনে আরা-মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নিত্য- নৈমিত্যিক সেবা কর্মের অংশ। বর্তমানে ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ১০৫টি প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম পরিবারের অর্থানুকুল্যে ও নির্দেশনায় নিয়মিতভাবে পরিচালিত।
আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আলহাজ্ব এম.এ. তাহের ও আলহাজ্ব এম. মনজুর আলম শুধু যে মানব সেবায় নিয়োজিত তাই নয় বরং এই আর্তমানবতার সেবার পরিধি বৃদ্ধির লক্ষে তাঁদেরই সন্তানদের হাতে সেবামূলক কর্মকান্ড সচল রাখার দায়িত্ব প্রদান করেছেন। সকল আউলাদ-ফর্জন্দ মিলে শিক্ষা বিস্তারে, জনকল্যাণমূলক কাজে, গরীব অসহায়দের অবস্থার উন্নয়নে, সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম পরিবারের ভুমিকা ও অবদান কোন অংশে কম নয়। দানবীর আলহাজ্ব এম. মনজুর আলম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাাচিত মেয়র ছিলেন। চট্টগ্রাম মহানগরের মানবসেবা, জনকল্যাণ ও সার্বিক উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টায় ও পরিশ্রমে, মেধা ও বুদ্ধিতে, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় নিপুণ হস্তে প্রশাসন পরিচালনা ও জন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছেন। তাঁরই সুযোগ্য ভ্রাতুষ্পুত্র ও আলহাজ্ব এম. এ তাহের-এর তনয় আলহাজ্ব এম. দিদারুল আলম চট্টগ্রাম নির্বাচনী এলাকা-৪ এর দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি জনসাধারণের আশা আকাক্সক্ষা ও দাবী পূরণ ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাঁর এলাকায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (স:) এর বাণী ও নির্দেশ মোতাবেক সদকা জারিয়া, আউলাদে ছোয়ালেহা ও ইলমে নাফেইন এর ছওয়াবের দ্বার আজীবন আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম পরিবারের জন্য উন্মুক্ত ও প্রশস্ত। তাই আপামর জন সাধারণ, আবাল বৃদ্ধ বনিতা বিশেষ করে উপকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও পরিবারের আন্তরিক দোয়া ও কামনা এই পরিবারের সকল সদস্য দীর্ঘজীবি হোক এবং দান ও সেবার হস্ত আরো উত্তরোত্তর প্রসারিত হোক। আমিন ।
“রাব্বি জিদ্নি ইলমাঁউ ওয়া আল হিক্নি বিচ্ছোয়ালেহিন।”

লেখক : সাবেক উপাধ্যক্ষ