ইসরায়েলের টানা বোমা বর্ষণ পুরনো কারাগারে আশ্রয় নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা

9

টানা ইসরায়েলি বোমা বর্ষণে গাজাবাসীদের আশ্রয়ের শেষ ঠিকানাও যখন হারিয়ে গেছে, তখন হত্যাকারী ও চোরদের রাখার জন্য তৈরি গাজার একটি পুরনো কারাগারে আশ্রয় নিয়েছেন শত শত ফিলিস্তিনি।
ইয়াসমিন আল-দারদাসি নামের ফিলিস্তিনি নারী জানিয়েছেন, খান ইউনিসের একটি এলাকায় বোমা বর্ষণের পর তার পরিবার আহতদের ফেলে চলে আসতে বাধ্য হয়। সেখান থেকে তারা সেন্ট্রাল কারেকশন ও রিহ্যাবিলিটেশন ফ্যাসিলিটি নামের কারাগারে তারা আশ্রয় নেন। প্রথমে তারা একটি গাছের নিচে একদিন কাটান, তারপর কারাগারের একটি প্রার্থনা কক্ষে চলে আসেন। এখানে তীব্র রোদ থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়, কিন্তু আর কিছুই নাই। খবর বাংলা ট্রিবিউন’র
দারদাসির স্বামী একটিমাত্র ফুসফুস নিয়ে জীবনযাপন করছেন এবং তার একটি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তাদের কোনও কম্বল বা তোশক নেই। অনেক ফিলিস্তিনিদের মতো বারবার উচ্ছেদের ভয়ে থাকা দারদাসি বলেছেন, আমরা এখানে থিতু হতে পারিনি।
ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে বেসামরিক লোকদের রক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তবে বাস্তবতা হলো, বারবার স্থানচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইসরায়েলি বোমা বর্ষণ থেকে নিরাপদ স্থান গাজায় আর নেই। বোমা বর্ষণে গাজার অনেকাংশ ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৩ জুলাই আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি নির্ধারিত মানবিক অঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করে বলেছে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফ।
গত বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি গাজা। দীর্ঘদিন ধরেই অঞ্চলটিতে দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব বিরাজ করছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় প্রতি দশজনের মধ্যে ৯ জন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যূত।
সারিয়া আবু মুস্তাফা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা তাদের পরিবারকে ট্যাংক আসার আগে নিরাপদে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা নামাজের পোশাকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
আবু মুস্তাফা বলেন, আমরা কিছুই নিয়ে আসিনি। আমরা পায়ে হেঁটে এখানে এসেছি। শিশুদের নিয়ে হাঁটতে হয়েছে। তিনি জানান, অনেক নারীর সঙ্গে পাঁচ বা ছয় শিশু ছিল এবং পানি খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। তার কোলে ছিল তার ভাইঝি, যার জন্ম হয়েছিল এই সংঘাতের মধ্যে। তার বাবা ও ভাইয়েরা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, আল-সাইদ আবু মুস্তাফা ছয়বার স্থানচ্যুত হওয়ার পর কারাগারে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা যদি একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন, তবে আবু মুস্তাফা এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনিরা আবারও স্থানচ্যুত হতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা কোথায় যাব? আমরা যে জায়গায়ই যাই না কেন, তা বিপজ্জনক।