আ.লীগ নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না : আইন উপদেষ্টা

12

পূর্বদেশ ডেস্ক

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সমীচীন হবে না বলে মনে করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে, তখন আপনি দেখেছেন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না, যদি না কোনো জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত থাকে। খবর বিডিনিউজের।
উপদেষ্টা বলেন, সত্যিকার অর্থে যদি কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকে, তাহলে প্রচন্ড সততার সঙ্গে তদন্ত করে এমন কিছু (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ।
এই কর্মকাÐের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।
এক মাসের বেশি সময় ধরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেকে এখন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করছেন। একটি দলকে কখন সন্ত্রাসী সংগঠন বলা উচিত, এমন প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি নস্যাৎ করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন ও শোষণহীন সমাজকে ধ্বংস করার জন্য যারা পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম করে, তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলা উচিত। তবে মতামত প্রকাশ যতটা অবারিত রাখা যায়, ততটাই ভালো।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাÐ’ চালানোর অভিযোগে গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং তাদের সহ অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
২৮ দিনের মাথায় গতকাল সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণ সরকার ‘পায়নি’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ কোনো নীতিগত অবস্থান থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে নাই। তারা রাজনৈতিক অপকৌশলের জন্য, আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করার জন্য এই ইস্যুটাকে এভাবে ব্যবহার করেছে।
বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের আদালতে তোলার সময় আইনজীবীরা যে বিশৃঙ্খলা করছেন, সে বিষয়েও আই্ন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, আদালত চত্বরেরে হামলাগুলো ‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না’।