আহত ইমরানের চিকিৎসা নিয়ে শংকিত পরিবার

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দুর্বৃত্তদের ছুরির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হওয়া মো. ইমরান হোসাইনকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই বাবা মো. শাহজাহানের। সংসারের আর্থিক অনটনের মধ্যে কীভাবে ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন, তা নিয়েই চরম হতাশা আর দুশ্চিন্তায় সময় কাটছে হতভাগা এ বাবার। তার দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ‘ছেলেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হবে, এ জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে’- চিকিৎসকদের বলা এমন কথা।
মো. শাহজাহান বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সরকারিভাবে সহায়তা পেয়েছি। বাসায় ফিরেছি আজ অনেকদিন। কিন্তু কেউ আমার ছেলেটার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে আসেনি। ফোন করেও খোঁজ-খবর নেয়নি। দুর্বৃত্তদের ছুরির আঘাতে আমার ইমরানের পেটের ডান পাশের হাড়ের নার্ভ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাতের আঙুলে পড়েছে একাধিক সেলাই। ঘটনার এতদিন পরও শারীরিক যন্ত্রণায় দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় কাটছে ইমরানের। চিকিৎসকরা বলেছেন- তাকে তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিছানায় বিশ্রামে থাকতে হবে। বেশি নড়াচড়া করা ঠিক হবে না। বর্তমানে প্রতিদিনই তার জন্য কয়েক প্রকারের ওষুধ কিনতে হয়। যেগুলোর দাম অনেক বেশি; যা আমার মতো গরিব-অসহায় বাবার পক্ষে কেনা অসম্ভব’।‘যারা আমার ছেলের এমন করুণ পরিণতি করেছে তাদের কিছুই হয়নি। ধার-দেনা করে ছেলের চিকিৎসা খরচ মেটাতে হচ্ছে আমাকে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব?’- পূর্বদেশ এর প্রতিবেদকের সাথে এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. শাহজাহান বলেন, ‘সরকারসহ অনেকেই আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে, তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে- এমন অনেক প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই পাচ্ছি না। হাসপাতাল থেকে ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরেছি আজ অনেকদিন। কিন্তু এখনও কেউ আমার ছেলেটাকে একটু দেখতেও আসেনি। কারও কাছ থেকে সামান্য আর্থিক সহায়তাও পাইনি। সংসারের আর্থিক অনটনের মধ্যে কীভাবে ছেলের চিকিৎসা খরচ চালিয়ে নিয়ে যাব তা বুঝে উঠতে পারছি না’।
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের এখন আসল কাজ হলো আহতদের খোঁজ-খবর নেয়া। কিন্তু তারা তা করছেন না। চট্টগ্রামের লালদীঘিতে যেদিন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এলেন, আমি সেখানে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা করতে পারিনি। চট্টগ্রামে যারা সমন্বয়ক তাদের সাথে দেখা করতে পারিনি। এখন ছেলের চিকিৎসার খরচ নিয়ে বড় বেকায়দায় পড়ে গেছি।
মো. ইমরান বলেন, ‘শরীরে কিছুই ভালো লাগছে না। শরীরজুড়ে ব্যথা আর অস্থিরতা। একটু ভালোভাবে ঘুমাতেও পারছি না। জীবনে কখনও কল্পনাও করেনি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। প্রতিদিনই আমার ওষুধ ও চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকার প্রয়োজন হচ্ছে যা সামাল দেওয়া কঠিন আমার বাবার পক্ষে। তাই সরকারসহ সবার কাছ থেকে আমি আর্থিক সহায়তা কামনা করছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। যাতে আমি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি’।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের একদিন আগে গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ইমরানকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ঘিরে ধরে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে তারা ইমরানকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে ইমরানের পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে তার হাত-পাসহ শরীরের বেশকিছু অংশে মারাত্মকভাবে জখম করে। মুমূর্ষু অবস্থায় রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা রক্তাক্ত অবস্থায় ইমরানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।