‘আর কোনোদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না’

17

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনে সমর্থন জানালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ সেøাগানে ভীষণ মর্মাহত হয়েছেন শিক্ষাবিদ, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেছেন, ‘কোটা সংস্কার করতে হবে, এই বিষয়টাকে আমি সমর্থন করি। তবে আন্দোলনের নামে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করার ব্যাপারটি কোনোভাবেই সমর্থন করি না।’
চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ‘মর্মাহত’ হয়ে রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান; যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়- ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ‘রাজাকার’ স্লোগানে মর্মাহত মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাতে লেখা একটি চিরকুট সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয়, আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্রছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই ‘রাজাকার’। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন, সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’ খবর বিডিনিউজের
জাফর ইকবালের লেখা চিরকুটটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন যুবলীগনেত্রী চৈতালী হালদার, কবি শিমুল সালাহ্উদ্দিনসহ অনেকেই।
চিঠিটির সত্যতা জানতে ফোন করা হলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘হ্যা, এটা আমারই লেখা’।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কার করার যে দাবি, তার সঙ্গে আমার সমর্থন রয়েছে। তবে আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেয়, তা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না’।
শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের সমালোচনা চলছে সর্বত্র। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও ‘রাজাকার’ স্লোগানের নিন্দা জানিয়েছেন।
যেসব শিক্ষার্থী ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান তুলেছে, তারা এ যুগের ‘সাচ্চা রাজাকার’ বলে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনিও।
আর নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা একাত্তরের গণহত্যা, মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন এবং তাতে সহায়তাকারী রাজাকারদের বূমিকা সম্পর্কে জানে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই স্লোগানে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না’।