আমার বাবার কি জানাজা হবে না

5

ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের ‘এক টুকরো অংশ’ হলেও দেখার আকুতি জানিয়েছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি বলেছেন, মানুষের দুর্ঘটনা বা রোগ ব্যাধিতে মৃত্যু হয়। কিন্তু আমার বাবাকে খুনিরা হত্যার পর দেহ কেটে টুকরা-টুকরা করেছে। সেই টুকরাতে হলুদ মশলাও মিশিয়েছে। কি কষ্ট দিয়ে আমার বাবাকে মেরেছে খুনিরা। আমি জীবনেও তা ভুলতে পারব না। আমি আমার বাবার লাশের এক টুকরো অংশ দেখতে চাই।
গতকাল শুক্রবার বিকালে ঝিনাইদহ শহরের মধুগঞ্জ বাজার মেইন বাসস্ট্যান্ডে এক মানববন্ধনে কাঁদতে কাঁদতে আক্ষেপ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমার বাবার কি জানাজা নামাজ হবে না? খবর বিডিনিউজ’র
আনারের মরদেহের সন্ধান চেয়ে ও হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে সংসদ সদস্যের নিজ ওয়ার্ড কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর উদ্যোগে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মানববন্ধনটি এক পর্যায়ে প্রায় জনসভাতে রূপ নেয়।
মানববন্ধনে ডরিন বলেন, আমি এতিম হয়ে গেলাম। আমার বাবার হত্যাকারী যাদেরকে ধরা হয়েছে তাদের প্রিভিয়াস রেকর্ড দেখুন। আমার বাবার মত তারা এমন অনেক নিরীহ মানুষকে খুন করেছে। আমি চাই দ্রুতই খুনীদের আটক করা হোক। নইলে আমার মত আরও কেউ এতিম হতে পারে।
ডরিন দাবি জানান, তার বাবার খুনিদের প্রধান হোতা কোটচাদপুর উপজেলার আক্তারুজ্জআমান শাহিনকে দ্রুত আটক করা হোক। সেই সাথে তার ভাই কোটচাঁদপুরের পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমকেও আটকের দাবি জানাই।তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার খুনি ভাই শাহিনকে দ্রুত আটক করা সম্ভব হবে।
ডরিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যদি তার বাবার হত্যার বিচার করতে পারেন, তাহলে আমার বাবার হত্যার বিচারও তিনি করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনি আমার অভিভাবক। আমি ও আমার পরিবারকে রক্ষা করবেন।
কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফের সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, সংসদ সদস্য আনারের মত একজন মানবদরদী নেতার অভাব পূরণ হবার মত নয়। সেই মানুষটিকে যারা নৃশংশভাবে কেটে টুকরা টুকরা করে হত্যা করেছে তারা মানুষ নয়, নরপশু। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, ব্যবসায়িক বা যে চক্রের কোন্দলেই তিনি খুন হন না কেন সব খুনির মুখোশ উন্মোচন করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানান বক্তরা।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনারের মেয়ে ডরিন তার কালীগঞ্জ শহরের বাসভবনের নিচে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও বাবা হত্যার বিচার দাবি করে কথা বলেন।
সংসদ সদস্য আনার নিখোঁজ হওয়ার পর গত ১৩ মে থেকেই ঢাকাতে অবস্থান করছিলেন ডরিন ও তার মা। পরে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে তারা নিজ বাড়িতে এসেছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের ডরিন বলেন, তার বাবা নিখোঁজের পর থেকে সরকারের সকল সংস্থা প্রশাসন তাকে উদ্ধারে সহযোগিতা করে আসছে। তিনি তার বাবার মরদেহ উদ্ধারেও প্রশাসনের সহযোগিতা চান।
এদিকে এমপি আনারের মৃত্যুর খবরে শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর তার নির্বাচনী এলাকার সব মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়।