আবু সাঈদকে গুলির নির্দেশ ছিল না

10

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করার ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, সেদিন পুলিশকে গুলি করার কোন নির্দেশ ছিল না। তাও কেন গুলি করেছে, সে বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল শনিবার নিজ জেলা দিনাজপুরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ। কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত দিনাজপুরে জেলা আওয়ামী লীগ ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় পরিদর্শন করতে সেখানে যান তিনি।
দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আবু সাঈদকে পুলিশকে গুলি করার কোন নির্দেশ ছিল না। পুলিশ কেন তাকে গুলি করেছে সেটি তদন্ত শুরু হয়েছে।” খবর বিডিনিউজ’র
গত ১৬ জুলাই কোটা আন্দোলনে যেদিন প্রথম মৃত্যু হয়, সেদিন প্রাণ হারান আবু সাঈদ। সেদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে লাঠি হাতে থাকা সাঈদকে গুলি করার ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সেদিন মোট ৬ জনের মৃত্যু হয় সংঘর্ষে। এদের মধ্যে চট্টগ্রামে আছেন এক ছাত্রদল নেতা, ঢাকায় আছেন এক ছাত্রলীগ কর্মী, তবে সাঈদকে গুলি করার বিষয়টি নিয়েই তোলপাড় হয় বেশি। এর প্রতিক্রিয়াতেই ১৮ জুলাই ডাকা হয় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি, যে কর্মসূচি ঘিরে তুলকালাম চলছে দেশে।
ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের সময় গুলিতে বেশ কয়েকজন ছাত্রের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়।
বিটিভি ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, সেতু ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারি স্থাপনার আগুন ধরিয়ে দেওয়া, ফায়ার সার্ভিসকে বাধা দানের মতো ঘটনা ঘটে। পরে হামলা হয় মেট্রোরেলে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় দুটি স্টেশন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সংযোগ, জারি হয় কারফিউ। এর মধ্যেও ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুরে সংঘাত চলতে থাকে।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় পুলিশের থানা ও ফাঁড়ি এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়, নরসিংদী কারাগারের ফটক ভেঙে সব বন্দিকে বের করে লুট করা হয় অস্ত্র ও গুলি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই এক সপ্তাহের সংঘাত সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার থেকে সংঘাত থামতে থাকে, তবে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে বুধবার, এখনও বন্ধ ট্রেন চলাচল। ইন্টারনেট ফিরলেও এর গতি সীমিত, আবার মোবাইল ইন্টারনেটও বন্ধ। দিনাজপুরে ১৮ জুলাই আওয়ামী লীগের জেলা ও সদর উপজেলা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়, বেশ কিছু মোটরসাইকেলে আগুনও দেওয়া হয়।
এসব সংঘাত ও সহিংসতা নিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “সারা দেশে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত জামাত-বিএনপি এবং জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বাধীনতা বিরোধী ইউনুস গংরা। তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে, সেটাকে থামিয়ে দেওয়া।
এটা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয় মন্তব্য করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটা হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের সন্ত্রাসী নৈরাজ্যকর কর্মকান্ড।” প্রতিমন্ত্রীর সাথে দিনাজপুরের ডিসি শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।