আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টার শঙ্কায় জনপ্রতিনিধিরা

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ থেকে আসা মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও যুদ্ধের কারণে সেখানকার রোহিঙ্গারা বিপদে পড়েছেন। তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, দুইদিন বিকট শব্দ বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে সারারাত মিয়ানমারের ওইপার থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ এপারে শুনতে পান টেকনাফের বাসিন্দারা। খবর বিডিনিউজের।
টেকনাফের মানুষজন বলছেন, এ রকম বিকট শব্দ আর কখনও শোনেননি তারা। সারারাত ধরে কেউ ঘুমাতে পারেননি। মুহুর্মুহু কেঁপে উঠছে বাড়িঘর। কেউ কেউ বলছেন, তারা যুদ্ধ বিমানও উড়তে দেখেছেন।
উপজেলার সাবরাং ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ বলেন, মঙ্গলবার বিকালে পর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রাতভর এমন বিস্ফোরণ এর আগে এমন তীব্র ছিল না। সীমান্ত এলাকার মানুষ পুরো রাত ঘুমহীন ছিলেন। লেদা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এহসানউল হক বলেন, আমার ছোট ভাই রমজান মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ এলাকায় বসবাস করছে। সকালে তার সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। সে জানিয়েছে, মংডু টাউনশিপের কাদিরবিল, মংনিপাড়া ও সুদাপাড়া গ্রামে ব্যাপক যুদ্ধ চলছে।
মংডু শহরের নাফনদী দিয়ে প্রবেশ পথ খায়েনখালী খাল। ওই খালের মোহনায় মঙ্গলবার বিকালের পর থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই কয়েকটি নৌকা দেখা গেছে বলে জানান সীমান্তের লোকজন। তাদের ধারণা, নৌকায় অপেক্ষামান রোহিঙ্গারা মংডু শহরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছে। রাতে মংডু শহরের আশপাশের প্রচÐ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এ পরিস্থিতিতে মংডু শহরের কয়েকটি গ্রামের আশেপাশে এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করবে বলে সীমান্তের লোকজন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এহসানুলও তার ভাইয়ের বরাতে বলছিলেন, বর্তমানে যেখানে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
টেকনাফের বাসিন্দা জেলে সমিতির সভাপতি আবদুল গণি বলেন, নাফ নদীর পূর্ব পাশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের কাদিরবিল, মংনিপাড়া ও সুদাপাড়া গ্রাম। বিস্ফোরণের শব্দ আসছে ওইসব গ্রাম থেকেই। শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন বলছেন, মর্টার শেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড থেকেই এমন শব্দ আসছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, দুইদিন বন্ধ থাকার পর আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রেবশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নাফ নদী ও সীমান্তে কোস্টগাড এবং বিজিবির সদস্যরা কড়া নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে টেকনাফ ২ বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান।