‘আত্মসম্মানের’ ভয়ে অফিস করেন না সিডিএ চেয়ারম্যান

52

এম এ হোসাইন

দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকে সশরীরে অফিস করছেন না চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনূছ। ‘আত্মসম্মান’ চিন্তা করেই তিনি অফিসে উপস্থিত হচ্ছেন না। যদিও ঘরে বসেই অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি-নেতারাও। আতঙ্কে আছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় পরিচয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরাও। সরকার পতনের পর তারা দিয়েছেন গা ঢাকা। সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনূছ আওয়ামী সরকারের শেষ সময়ে এসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। সরকার পতনের পর থেকে সিডিএতে যাননি তিনি। গত ১৬ দিনে একবারও সংস্থাটিতে দেখা যায়নি চেয়ারম্যান ইউনূছকে। ফলে সিডিএতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্তও আটকে আছে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে।
সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনূছ বলেন, ‘আত্মসম্মানের ভয়ে অফিস করিনি। পুলিশ একটিভ হোক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, তখন অফিস করবো। এখন নির্দেশনা দিচ্ছি। প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রেখেছি। কয়েকদিন যাক, সবাইকে সাথে নিয়ে অফিসিয়াল কাজ শুরু করবো।’
সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের অফিসেও হামলা হয়েছে। এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সিডিএতেও। ইতোমধ্যে বিএনপি সমর্থক কর্মচারীরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংস্থাটিতে। যার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে খোদ সংস্থা প্রধানের মধ্যেও। তাছাড়া চসিক কার্যালয়ে ঘেরাও করেছিল ছাত্ররা। এমন ঘটনা সিডিএতে ঘটতে পারে এমন আশঙ্কাও আছে। এমন পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারকি করছেন সিডিএ চেয়ারম্যান ইউনূছ। যোগাযোগ রাখছেন সংস্থার দায়িত্বশীলদের সঙ্গে। তাদের মাধ্যমেই অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
যোগাযোগ করা হলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার এর মধ্যে অফিস করেননি। কখন থেকে করবেন সেটাও বলতে পারছি না। আমাদের কাজের তেমন সমস্যা হচ্ছে না, আমরা সব কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে নেয়া যায় না। অবশ্য চেয়ারম্যান স্যার শারীরিকভাবেও অসুস্থ।’
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনূছকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই দিন সিডিএ চেয়ারম্যান হিসাবে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম জহিরুল আলম দোভাষের মেয়াদ শেষ হয়। মোহাম্মদ ইউনূছকে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। মোহাম্মদ ইউনূছ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ চট্টগ্রামের মহাসচিব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিডিএ চেয়ারম্যানও যে কোনো সময় বাতিল হতে পারে। মূলত এই ভয়ে চেয়ারম্যান অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। আওয়ামী লীগের দলীয় পদে থেকে তিনি সিডিএতে চেয়ারম্যান হিসাবে থেকে যাবেন সেটা কেউ মানবেন না। অফিসে আসলেই বিশৃঙ্খলা হবে।