আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে

8

 

চট্টগ্রামসহ সারা দেশে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলছে রাজনৈতিক হানাহানি। এতে চরমভাবে অবনতি ঘটছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। জানা যায়, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় শৈথিল্যের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে খুনোখুনি ও অপহরণের ঘটনাও ঘটছে। এসব ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ ঘনীভূত হচ্ছে। এছাড়া নগর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চুরি, ডাকাতি ও ছিন্তাইয়ের ঘটনা এখন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ অবস্থার দ্রæত অবসান করতে হবে আইন-মৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। একইসাথে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করতে হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। কিন্তু সেই দিনই দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা, থানায় আগুন ও ভাঙচুরসহ হতাহতের ঘটনায় গা ছাড়া দেন পুলিশ বাহিনী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পুলিশ বিভাগকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনও থানাগুলো পুরোপুরি সচল হয়নি। পুলিশের অনেক সদস্য আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। অনেকে কাজে যোগদান করেন নি এখনও। এছাড়া ছাত্রদের আন্দোলনকালে সহিংস ঘটনার মামলা, আসামি গ্রেফতার ও তাদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে মূলত পুলিশ বিভাগ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উন্নয়নে তেমন মনোযোগ দিতে পারছেনা। যা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। এক্ষেত্রে সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের কার্যক্রমে গতিফিরিয়ে আনার কোন বিকল্প নেই। গতকাল রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গত ২৫ দিনে রাজনৈতিক দ্বন্দের জেরে নগরী ও জেলায় চাঞ্চল্যকর জোড়াখুনসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৯ আগস্ট রাত আটটার দিকে নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের নাহার কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় মো. আনিস এবং হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ এলাকায় মাসুদ কায়সারকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারা দু’জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মী এবং হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুচ গণির অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। নিহতদের পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দলের প্রতিপক্ষের হাতে তাদেরকে নির্মমভাবে খুনের শিকার হতে হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের ঘটনায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী ও জেলার হাটহাজারী থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় দলীয় প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার ৩০ আগস্ট সন্ধ্যা ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট ঝঙ্কার সিনেমা মোড় থেকে চট্টগ্রাম জেলা পূর্ব শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাশেদ চৌধুরীকে দুর্বৃত্তরা তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ছাত্রশিবির ও জামায়াতের নেতারা। ফটিকছড়ি উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইসমাঈল গনী অভিযোগ করে বলেন, ওইদিন ফটিকছড়ির নাজিরহাটে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনের অতিথি হিসেবে রাশেদ চৌধুরী আসেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুনরায় শহরে ফিরে যাওয়ার জন্য নাজিরহাট ঝঙ্কার সিনেমা মোড়ে যান। সেখান থেকে তাকে কয়েকজন তুলে নিয়ে গেছে। বিষয়টি ফটিকছড়ি থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮ আগস্ট জেলার রাউজান থেকে আবদুল মান্নান নামে এক শ্রমিকলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়া সড়ক থেকে শ্রমিক লীগ নেতার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মান্নান রাঙামাটির রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবির আহমেদের ছেলে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিহত আবদুল মান্নান বালু ও কংক্রিটের ব্যবসা করতেন। রাজনীতি ও ব্যবসা নিয়ে এলাকায় প্রতিপক্ষের সাথে তার দ্ব›দ্ব ছিল। পূর্ব বিরোধের জেরেই রাঙামাটির বেতবুনিয়া থেকে ধাওয়া করা হয় মান্নানকে। প্রায় দশ কিলোমিটার ধাওয়া করে রাউজানে এনে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় লোকজন নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরিবারকে খবর দিলে নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনরা গিয়ে উদ্ধার করে রাউজানের গহিরায় জে কে মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নিহত হওয়ার অন্তত ১৩ ঘণ্টা আগে শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মান্নান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আঘাত ভুলে গেলেও আঘাতকারীকে ভোলা যাবে না। কারণ ক্ষত শুকিয়ে গেলেও দাগ কিন্তু মুছে যায় না।’ এছাড়া গত পঁচিশ দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আরো ১৭ জনের মৃত্যুও খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনসমূহ পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হতেও দেখা যাচ্ছে। দলের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তায় তারেক রহমান এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাবধান করে যাচ্ছেন, কিন্তু কেউ ক্ষান্ত হচ্ছে না। আমরা মনে করি, রাজনৈতিদক হানাহানি বন্ধ করতে হলে মূল দলের নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। একইসাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করতে হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।